পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আহ্বান।

চাহিয়াছিল রমণী সেইদিকে মুখ ফিরাইয়া যেন স্বপ্ন দেখিতেছিল। গায়ক বত দূরবর্ত্তী হইতেছিল, গীতধ্বনি ততই ক্ষীণ হইয়া আসিতেছিল; কিন্তু তখনও শোনা যাইতেছিল;

“আমার সকল স্মরণে এস হে, আমার সকল ভরমে এস!

আমার ধরম-করম, সোহাগ-সরম, জনম মরণে এস।”

 ক্ষীণ হইতে ক্ষীণতর হইয়া সঙ্গীতধ্বনি থামিয়া গেল! হঠাৎ দিগন্ত যেন ইন্দ্রজাল মুক্ত হইল, মৃগযুথ উর্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করিল; স্রোতস্বিনী এতক্ষণ থামিয়াছিল, আবার কুলুকুলু রবে বহিতে আরম্ভ করিল, পাষাণ আবার কঠিন হইয়া উঠিল। কে যেন দারুণ আঘাত করিয়া রমণীর সুখ -স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া দিল। বাসন্তী পূর্ণিমা সুর্য্য কিরণে মিলাইয়া গেল, যমুনাপুলিন ধূলির ন্যায় উড়িয়া গেল, দিগন্ত যেন একটু টলিল, আবার কাঁপিয়া উঠিল, সমস্ত ঘুরিতে লাগিল। রমণী মূর্চ্ছিতা হইয়া শিলাখণ্ডের পার্শ্বে পড়িয়া গেল।

 অনেকক্ষণ পরে আরও দুইটি বঙ্গদেশীয় রমণী বনমধ্য হইতে নির্গত হইয়া সেই স্থানের নিকটে আসিলেন। উভয়েই সধবা; একজন প্রৌঢ়া, দ্বিতীয় তরুণী। দ্বিতীয়া প্রৌঢ়াকে জিজ্ঞাসা করিলেন “এই খানটাই না মা?”

 প্রৌঢ়া। কি জানি মা আমি কিছু ঠিক পাচ্ছি না।

 দ্বিতীয়া। এই খানটাইত, ঐ যে সেই বড় পাথরখানা দেখতে পাচ্চি। উভয়ে দ্রুতপদে শিলাখণ্ডের নিকটে আসিয়া দেখিলেন যেন শেফালিকার একটি স্তূপ শুভ্র বস্ত্রে আচ্ছাদিত রহিয়াছে। কাতরকণ্ঠে প্রৌঢ় ডাকিলেন, “ইন্দু!”

৫৫