পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হুকুম এইরূপে পণ্ড হইতে পারে না। যমেরা কৌশল কবিয়া রাজার দীপ নিবাইয়া দিল, তাঁহার স্ফটিকপাত্রের জল ঢালিয়া ফেলিল এবং তাঁহার বিষম তৃষ্ণা লাগাইয়া দিল। রাজা তৃষ্ণার্ত্ত হইয়া জল জল করিতে লাগিলেন এবং যমবিশেষের পরামর্শে ময়নামতী ভিন্ন অপর কাহারও হস্তে জল খাইবেন না সঙ্কল্প করিয়া বসিলেন। সুতরাং ময়নামতীকে জল আনিতে যাইতে হইল, রাজার জীবনও সেই অবকাশে অপহৃত হইল। ময়নামতী গঙ্গাদেবীর নিকট অবস্থা জানিতে পারিয়া (কোনও মতে ছদ্মবেশে) একেবারে যমপুরীতে হাজির। তাঁহার হস্তে যমেরা অশেষ নির্যাতন ভোগ করিল। কাজেই বিধাতার রাজত্ব ঠিক রাখিবার জন্য ময়নামতীর গুরু গোরক্ষনাথ আপোষের প্রস্তাব করিলেন, নারদের দ্বারা আশীর্ব্বাদলিপি লেখাইয়া ময়নামতীকে পুত্রবর দিলেন। ময়নামতী দেখিলেন আশীর্ব্বাদানুসারে পুত্রের বয়স ১৮ বৎসর মাত্র। তিনি ছানি হুকুম চাহিয়া বসিলেন। তাহা আর হইল না, কিন্তু বন্দোবস্ত হইল যে, হাড়িসিদ্ধার চরণ ভজনা করিলে ময়নামতীর পুত্র অমর হইবে। ময়নামতীর গর্ভে সন্তানের আবির্ভাব হইলে মাণিকচন্দ্রের শব ভস্মীভূত হইল। ময়নামতী শবের পার্শ্বে অনলে শয়ন করিলেন, কিন্তু অনল তাঁহার কেশও পোড়াইতে পারিল না। তিনি সুস্থ শরীরে পতির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সমাপনের পর এক পুত্র প্রসব করিলেন। এই পুত্রই গোপীচাঁদ। পুত্রকে গৃহে আনিবার সময় রাস্তায় আর একটি শিশু যুটিল, তাহাকেও কুড়াইয়া আনিয়া লালনপালন করিতে লাগিলেন; ইহার নাম হইল খেতুয়া। রাজকুমারের বিদ্যাশিক্ষা হইল; তাহার পর ৯ বৎসর (মতান্তরে ১২ বৎসর) বয়সে তাঁহার বিবাহের আয়োজন হইল। হরিচন্দ্র বা হরিশ্চন্দ্র রাজার কন্যা অদুনা ও পদুনা রাজার অঙ্কলক্ষ্মী হইলেন।

রদুনাক বিবাও কৈল্লে পদুনাক পাইল দানে।
এক শত বান্দি পাইল ব্যাবারের কারণে॥ (পৃঃ ৫৩)

 রাজকুমার ক্রমে রাজপাটে বসিলেন। তখন ময়নামতী ফেরুসা হইতে আসিয়া তাঁহাকে সিদ্ধা হাড়ির শিষ্যত্ব গ্রহণ করতঃ সন্ন্যাসী হইতে উপদেশ দিলেন। রাজা চমকিয়া উঠিলেন, হাড়ির প্রতি অবজ্ঞাসূচক বাক্য প্রয়োগ করিলেন, হাড়ির প্রসঙ্গে জননীর প্রতি কলঙ্ক পর্য্যন্ত আরোপ করিতে ত্রুটি করিলেন না। ময়নামতী ক্রোধে গুরু গোরক্ষনাথকে স্মরণ করিলেন। গুরু আসিয়া গোপীচাঁদের সন্ন্যাসাবস্থায় নানারূপ ক্লেশ নির্দ্দেশ পূর্ব্বক অভিশাপ দিয়া প্রস্থান করিলেন। ময়নামতী সেদিনকার মত ফিরিয়া গেলেন, কিন্তু পুনরায় আসিয়া পুত্রকে নানারূপ উপদেশ দিয়া সন্ন্যাসে যাইবার জন্য উৎসাহিত করিতে লাগিলেন। তিনি বিবিধ