পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮

পারে। করতোয়া হইতে চট্টগ্রাম পর্য্যন্ত সমস্ত ভূভাগের অধীশ্বর না হইলেও মাণিকচন্দ্র ও গোপীচাঁদের পাট ময়নামতী পাহাড় ও রংপুর জেলা উভয় স্থানেই থাকিতে পারে। ভবানীদাসের গানে পাওয়া যায়,—

বাপের মিরাশ এড়ি জাইমু গৌড়র সহর।
দাদার মিরাশ এড়ি জাবে কামলাক নগর॥
তুমি মাএর জত বাড়ি কলিকা নগর।
আমি বাড়ি বান্ধিয়াছি মেহারকুল শহর॥ (পৃঃ ৩২৫)

মেহারকুল বলিয়া বাস্তবিক কোন সহর ছিল বলিয়া মনে হয় না। কামলাক নগরকে বর্ত্তমান কুমিল্লা ধরিয়া লইলে উহা মেহেরকুলেরই অন্তর্গত। “বাপের মিরাশ” ও “দাদার মিরাশ” কি অর্থে প্রযুক্ত হইয়াছে বলা কঠিন। যে স্থানে ময়নামতী মাণিকচন্দ্র হইতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর অবস্থিতি করিতেন, সেই স্থানকেই রংপুরের গানে পুনঃ পুনঃ ফেরুসা নগর বলা হইয়াছে। ফেরুসা নগর কোথায় ছিল নিশ্চয় করিয়া বলা যায় না। রংপুর জেলার ময়নামতীর কোটকে বলা হইয়া থাকিতে পারে। রংপুরের প্রবাদানুসারে ময়নামতীর পিতা এই ফেরুসা নগরে রাজত্ব করিতেন। একটী অপেক্ষাকৃত আধুনিক গাথায় পাওয়া যায়,

ফেরুসা নগরে রাজা নামে তিলকচন।
রূপে গুণে কুলে শীলে ধর্ম্মপরায়ণ॥
পুত্র কন্যা নাই রাজার সদাই দুঃখ মনে।
হরগৌরী পূজা রাজা করে রাত্রিদিনে॥
সন্তোষ হইয়া বর দিলেন শঙ্করী।
জন্মিবে তোমার ঘরে উপের বিদ্যাধরী॥

ইহার পর ইন্দ্রের সভায় নৃত্যের সময় এক ঢুলী ও নর্ত্তকীর তাল ভঙ্গ হইল। ইন্দ্র কর্ত্তৃক শাপ-গ্রস্ত হইয়া ঢুলী মাণিকচাঁদরূপে এবং নর্ত্তকী তিলকচাঁদের কন্যা ময়নামতী বা ময়নামন্ত্রীরূপে জন্মগ্রহণ করিল। ক্রমে ময়নামতীর এক ভগিনী জন্মিল, তাহার নাম হইল সিন্দুরমতী। এই মতে ধর্ম্মপাল রাজার পুত্র মৌপাল, তাঁহার পুত্র মাণিকচন্দ্র। এই গাথাটীর কোন ঐতিহাসিক মূল্য আছে বলিয়া মনে হয় না, তবে এরূপ হইতে পারে যে, তিলকচাঁদ এই অঞ্চলের ভূম্যধিকারী ছিলেন এবং মাণিকচন্দ্র অপুত্রক শ্বশুরের বিষয় প্রাপ্ত হইয়া এই জনপদকে গোপীচন্দ্রের বাপের মিরাশে পরিণত করিয়াছিলেন। “দাদার মিরাশ’ গোপীচাঁদের দাদা সম্পর্কিত কাহারও জমিদারী হইতে পারে। ভবানীদাস প্রণীত গ্রন্থে পাই, একস্থানে গোপীচন্দ্র বলিতেছেন,—

‘বড় ভাই আছে মোর মাধাই তাম্বরী’ ইত্যাদি। (পৃঃ ৩৫৩)