পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

গৌড়রাজমালা।

তাঁহার [যোধপুর-রাজ্যের অন্তর্গত দৌলতপুরায় প্রাপ্ত] ৯০০ বিক্রম সম্বতের [৮৪৩ খৃষ্টাব্দের] তাম্রশাসন মহোদয়ে বা কান্যকুব্জে সম্পাদিত বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছে।[১] সুতরাং গোয়লিয়র-প্রশস্তি-রচনার পরে, এবং দৌলতপুরার তাম্রশাসন সম্পাদনের [৮৪৩ খৃষ্টাব্দের] পূর্ব্বে, কোন সময়ে ভোজকর্ত্তৃক কান্যকুব্জ অধিকৃত হইয়াছিল। যে যুদ্ধে ধর্ম্মপালকে পরাজিত করিয়া, ভোজ কান্যকুব্জ-অধিকারের পথ প্রশস্ত কবিযাছিলেন, সেই যুদ্ধেই সম্ভবত মহাসামস্ত বাহুকধবল উপস্থিত ছিলেন।

 হৰ্ষবর্দ্ধনের রাজধানী [কান্যকুব্জ] অধিকারে সমর্থ হইলেও, প্রতীহার-রাজ মিহির-ভোজ হৰ্ষবর্দ্ধনের ন্যায় “সকলোত্তরা-পথেশ্বর” হইতে সমর্থ হইয়াছিলেন না। উত্তরাপথের পূর্ব্বভাগে অবস্থিত গৌড়-রাজ্যে ভোজ কখনও হস্তক্ষেপ করিতে সাহসী হইয়াছিলেন, এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। মধ্যভারতে রাষ্ট্রকূট-পরবল, গৌড়াধিপ ধর্ম্মপালের আশ্রয়ে, স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিতে পারিয়াছিলেন। পশ্চিমভাগে লাটপ্রদেশ [বর্ত্তমান গুজরাত] মান্যখেটের রাষ্ট্ৰকূট-রাজের “মহাসামন্তাধিপতির” অধিকৃত ছিল। লাটের রাষ্ট্ৰকূট-মহাসামন্তাধিপতি দ্বিতীয় ধ্রুবরাজের [৮৬৭ খৃষ্টাব্দের] একখানি শিলালিপি হইতে জানিতে পারা যায়,—ধ্রুবরাজ যুদ্ধে মিহিরভোজকে পরাজিত করিয়াছিলেন। সুতরাং ধর্ম্মপাল এবং মিহির-ভোজ এই উভয় প্রতিদ্বন্দ্বীর কাহারও আশা সম্পূর্ণরূপে ফলবতী হইয়াছিল না। কিন্তু ধর্ম্মপালের সুদীর্ঘ রাজত্বকালে, গৌড়মণ্ডলে সুখশান্তি বিরাজমান ছিল। খালিমপুরে-প্রাপ্ত তাম্রশাসনে উক্ত হইয়াছে,—“গ্রামোপকণ্ঠে বিচরণশীল গোপালকগণের মুখে, প্রতি গৃহের চত্বরে ক্রীড়াশীল শিশুগণের মুখে, প্রতি বাজারে মানাধ্যক্ষগণের মুখে, এবং প্রতি প্রমোদগৃহে পিঞ্জরাবদ্ধ শুকপক্ষিগণের মুখে নিজের প্রশংসাগীতি শ্রবণ করিয়া, ধর্ম্মপাল সর্ব্বদা লজ্জাবনত মুখ ফিরাইয়া থাকিতেন।” এই শ্লোকটি স্তাবকোক্তি বলিয়া উপেক্ষিত হইতে পারে না। কারণ, আর কোনও প্রশস্তিতে রাজার সম্বন্ধে বিভিন্ন শ্রেণীর প্রজার অভিমত এরূপ ভাবে উল্লিখিত হইতে দেখা যায় না; এবং বিশেষ কারণ ব্যতীত, এরূপ বিশেষোক্তি ধর্ম্মপালের প্রশস্তিতে স্থান পাইয়াছে বলিয়া মনে হয় না। প্রজাপুঞ্জ যাঁহার পিতাকে রাজলক্ষ্মীর পাণিগ্রহণ করাইয়াছিলেন, সেই ধর্ম্মপাল যে প্রজারঞ্জনে যত্নবান্ হইবেন, এবং তাঁহার যে প্রতিভা এক সময় তাঁহাকে উত্তরাপথের সার্ব্বভৌম-পদলাভে সমর্থ করিয়াছিল, সেই প্রতিভাবলে তিনি যে প্রজারঞ্জনে সফলমনোরথ হইবেন, ইহাতে আর আশ্চর্য্যের বিষয় কি?

 ধর্ম্মপালের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী দেবপালদেবও পিতা-পিতামহের ন্যায় পরাক্রমশালী ছিলেন। ধর্ম্মপাল যে পদলাভ করিয়াও রক্ষা করিতে পারেন নাই, দেবপালের পক্ষে উত্তরাপথের সেই সার্ব্বভৌমের পদলাভ আর সম্ভবপর ছিল না; কিন্তু তিনি স্বীয় প্রতিভায় এবং গৌড়জনের বাহুবলে উত্তরাপথ এবং দক্ষিণাপথ এই উভয় খণ্ডের নৃপতি-সমাজে শ্রেষ্ঠতালাভে সমর্থ  হইয়া-

  1. Keilhorn’s List of Northern Inscriptions, No. 710.

২৮