পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ধর্ম্মপালদেবের তাম্রশাসন।

পশ্চিমে “গঙ্গিনিকা”,[১] উত্তরে “কাদম্বরী-দেবকুলিকা”[২] ও খর্জ্জূরবৃক্ষ। পূর্ব্বোত্তরে রাজপুত্র দেবট কৃত “আলি”,[৩] [এই আলি] “বীজপূরকে”[৪] গিয়া প্রবিষ্ট হইয়াছে। পূর্ব্বদিকে বিটক-কৃত “আলি”, তাহা[৫] খাটক-যানিকাতে গিয়া প্রবেশ করিয়াছে।[৬] [তাহার পর] জম্বূ যানিকা[৭] আক্রমণ করিয়া [তন্নিকটবর্ত্তী হইয়া] জম্বূ-যানক পর্য্যন্ত গিয়াছে। তথা হইতে নিঃসৃত হইয়া, পুণ্যারাম-বিল্বার্দ্ধস্রোতিকা পর্য্যন্ত গিয়াছে। তথা হইতে নিঃসৃত হইয়া, নলচর্ম্মটের

    “বরেন্দ্রের” বাহিরেও “শ্রীপুণ্ড্রবর্দ্ধন ভুক্তি” বিস্তৃতি লাভ করিবার প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া যায়। ব্যাঘ্রতটী, মহন্তাপ্রকাশ পালিতক এবং ক্রৌঞ্চশ্বভ্র কোথায় ছিল, তাহা এখনও নির্ণীত হয় নাই বলিয়া, তৎসম্বন্ধে নানা তর্ক বিতর্ক প্রচলিত হইয়াছে।

  1. “গঙ্গিনিকা”-শব্দ এখনও “গাঙ্গিনা”-নামে বরেন্দ্র-মণ্ডলে প্রচলিত আছে। মরা নদীর পুরাতন খাত এই নামে কথিত হইয়া থাকে। সুতরাং বরেন্দ্র-মণ্ডলের কোন স্থানেই “গঙ্গিনিকার” অসদ্ভাব নাই।
  2. “দেবকুল”-শব্দ হইতে “দেউল”-শব্দ প্রচলিত হইয়াছিল। “দেবকুলিকা” শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র দেউল বা “মন্দির”। অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ “দেবকুলিকাকে” ক্ষুদ্র দেবমন্দির [Small temple] বলিয়াই ব্যাখ্যা করিয়া গিয়াছেন। নীলাম্বর বলরাম “কদম্বর” বলিয়া, তাঁহার স্ত্রী “কাদম্বরী” নামে পরিচিতা। সরস্বতীও “কাদম্বরী” নামে পরিচিতা ছিলেন। তাহার পরিচয় “মেদিনীকোষে” উল্লিখিত আছে। যথা,—

    “कादम्बरस्तु दध्यग्रे मद्यभेदे नपुंसकं।
    स्त्री वारुणि-परभृता भारती-सारिकासु च॥”

     অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ বা বটব্যাল মহাশয় ইহার ব্যাখ্যা করেন নাই, কিন্তু এখানে “কাদম্বরী-দেবকুলিকা” একটি “সরস্বতী-মন্দিরের” পরিচয় প্রদান করিতেছে বলিয়াই বোধ হয়।

  3. “अालिः सग्वी सेतुगलि रालि रावलि रिष्यते।”

     শাশ্বত-কোষের এই নির্দ্দেশে “আলি”-শব্দের “সেতু”-অর্থ থাকিলেও, এখানে আদ্যন্তের সঙ্গে তাহার সামঞ্জস্য না থাকায়, অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ ইহাকে dike বলিয়া, এবং বটব্যাল মহাশয় embankment বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়া গিয়াছেন। বরেন্দ্র-মণ্ডলে প্রচলিত “বান্ধাইল”-শব্দে “আলির” স্মৃতি চিরস্মরণীয় হইয়া রহিয়াছে। কোন্ রাজপুত্র দেবট এই তাম্রশাসনোক্ত “আলি” বান্ধাইয়া দিয়া স্মরণীয় হইয়াছিলেন, তাহার পরিচয় অদ্যাপি আবিষ্কৃত হয নাই।

  4. অমরকোষে [২।৪।৭৮] “বীজপূরঃ”—শব্দই দেখিতে পাওয়া যায়। স্বামিকৃত টীকায় “বীজপূরক”-শব্দেরও উল্লেখ আছে। যথা,—

    “फलपूरो वीजपूरः केसरी वीजपूरकः।
    वीजकः केसराम्लश्च मातुलुङ्गश्च पूरकः॥”

     শব্দকল্পদ্রুমে “टावा लेवु इति वङ्गभाषा” এবং “विजौरा इति हिन्दीभाषा” বলিয়া তাহার ব্যাখ্যা লিখিত আছে। অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ [কিঞ্চিৎ সংশয় প্রকাশ করিয়া] ইহাকে citron-grove, এবং বটব্যাল মহাশয় [নিঃসংশয়ে] grove of lemons বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়া গিয়াছেন।

  5. অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ সমগ্র বর্ণনাটির অনুবাদ সাধনে অসমর্থ হইয়া লিখিয়া গিয়াছেন,—From here up to the end of the description of the boundaries of the village of Kraunchasvabhra I am unable to translate the text. গ্রামাদির চতুঃসীমার উল্লেখ করিতে গিয়া, কর্ত্তৃকর্ম্মক্রিয়াপদের সুপরিচিত সমাবেশরীতি সুরক্ষিত হইতে পারে নাই, এবং সংজ্ঞাশব্দের বাহুল্যের সঙ্গে লিপিকর-প্রমাদের আতিশয্য মিলিত হইয়া, এই গদ্যাংশকে দুর্ব্বোধ করিয়া রাখিয়াছে!
  6. বটব্যাল মহাশয় “যানিকা”-শব্দের artificial water course বলিয়া অনুবাদ লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন।
  7. জম্বূ-যানিকাও water-course lined with Jambu trees বলিয়া অনূদিত হইয়াছে।

২৫