বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'9 চতুষ্কোণ মধ্যে এই চারকোণ ঘরটিতেই কেবল নির্বিকার অবহেলার সঙ্গে গা এলাইয়া দিয়া সে মাথার যন্ত্রণায় কাবু হইতে পারে। মাথা ধরা বাড়িবার আগে এবং স্থায়িভাবে গা এলানোর আগে কয়েকটি ব্যবস্থা করিয়া ফেলা দরকার। মনে মনে রাজকুমার ব্যবস্থাগুলির হিসাব করিতে লাগিল। রসিকবাবুর বাড়ি গিয়া গিরীন্দ্ৰনন্দিনীর মাকে বলিয়া আসিতে হইবে, আজ রাত্রে তাদের বাড়ি খাওয়া অসম্ভব। অবনীবাবুর বাড়ি গিয়া মালতীকে বলিয়া আসিতে হইবে, আজ সে তাকে পড়াইতে যাইতে পারিবে না। স্যার কে. এল-এর বাড়ি গিয়া রিনিকে বলিয়া আসিতে হইবে, আজ তার সঙ্গে কারো পাটিতে যাওয়া বা জলতরঙ্গ বাজনা শোনানোর ক্ষমতা তার নাই । কেদারবাবুর বাড়ি গিয়া সরাসীকে বলিয়া আসিতে হইবে, সমিতির সভায় গিয়া আজ সে বক্তৃতা দিলে, সকলে শুধু “উঃ আঃ' শব্দই শুনিতে পাইবে । রাজেনকে একটা ফোন করিয়া দিতে হইবে, কাল সকালে কাজে ফাকি না দিয়া তার উপায় নাই । এই কাজগুলি শেষ করিতে বেশীক্ষণ সময় লাগিবে না, গিরি, মালতী, রিনি। আর সরসী চারজনের বাড়িই তার বাড়ির খুব কাছে, একরকম পাশের বাড়িই বলা যায়। পশ্চিমে বড় রাস্তার ধারে স্যার কে. এল-এর প্রকাণ্ড বাড়ির পিছনে তার বাড়িটা আড়ালে পড়িয়া গিয়াছে, স্যার কে. এল-এর বাড়ির পাশের গলি দিয়া ঢুকিয়া তার বাড়ির সদর দরজায় পৌছিতে হয় । উত্তরে গলির মধ্যে তার বাড়ির অপর দিকে কেদারবাবুর বাড়ি। পুবে, গলির মধ্যে আর একটু আগাইয়া গেলে ডান দিকে যে আরও ছোট গলিটা আছে তার মধ্যে ঢুকিলেই বঁা দিকে অবনীবাবুর বাড়ি। দক্ষিণে, ছোট গলিটা ধরিয়া খানিক আগাইয়া ডান দিকে হঠাৎ মােড় ঘুরিবার পর রসিকবাবুর বাড়ি এবং গলিটারও সেইখানেই সমাপ্তি। রিনি। আর সরাসী দু'জনের বাড়িতেই ফোন আছে, রাজেনকে ফোন করিতেও হাঙ্গামা হইবে না।