পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যশোমতী
১১৭

সেই বৃদ্ধা যশো—এই দুইএর আকাশপাতাল প্রভেদ, তাই হঠাৎ একটা প্রবল ধাক্কা খেয়েছিলুম।

 রাকা বলল, হায় রে পুরুষের মন, রূপ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না! আমি এখনই তো পেঁচী, বুড়ো হলে কি যে গতি হবে জানি না।

 —ভয় নেই দিদি। তোমার ক্রমিক রূপান্তর ধ্রুবের চোখের সামনে একটু একটু করে হবে, ও টেরই পাবে না, ডায়ারিতেও নোট করবে না। শেষ বয়সে যদি হাড়গিলে কি শকুনি গৃধিনী হয়ে পড় তাতেও ধ্রুব শক্‌ড হবে না। প্রেমের দুই অঙ্গ, একটা দেহাশ্রিত, আর একটা দেহাতীত। তোমাদের মনে এখন এক সঙ্গে দুটো মিশে আছে। কিন্তু যতই বয়স বাড়বে ততই প্রথমটা লোপ পাবে, শুধু দ্বিতীয়টাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে।

 রাকা বলল, পঞ্চান্ন বছর পরে ঠাকুমাকে হঠাৎ দেখে আপনার মনে একটা ধাক্কা লেগেছিল তা বুঝলুম, কিন্তু তার ফলে আপনার হৃদয়ের অবস্থা অর্থাৎ ঠাকুমার প্রতি আপনার মনোভাব কি রকম দাঁড়াল?

 —পর পর দুটো অনুভূতি হল, যশোমতীর দুই রূপ দেখলাম। ওঁকে ভুলেই গিয়েছিলুম, কিন্তু ওঁর হাসি দেখে আর গলার স্বর শুনে পঞ্চান্ন বছর আগেকার সেই তন্বী কিশোরী মূর্তি মনের মধ্যে ফুটে উঠল। তার কিছুমাত্র বিকার হয় নি, একবারে যথাযথ অক্ষয় হয়ে আছে। তার যে পরিবর্তন পরে ঘটেছে তা তো আমি দেখি নি, সেজন্যে তার কোনও প্রভাবই আমার চিত্তস্থিত মূর্তির ওপর পড়ে নি। তার পরেই যশোর অন্য এক রূপ দেখলুম, দেহের নয়, আত্মার। আমার বুদ্ধিতে মন আর আত্মা একই বস্তু, বয়সের সঙ্গে তার পরিবর্তন হয়, কিন্তু ধারা বজায় থাকে সেজন্য চিনতে পারা যায়। যেমন, নদীর জলপ্রবাহ নিত্য নতুন, কিন্তু প্রবাহিণী একই। যশো-