পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
চয়নিকা

লজ্জা মুকুলিত মুখে রক্তিম অধরে
বধূ হয়ে প্রবেশিলে চিরদিন তরে
আমার অন্তরগৃহে—যে গুপ্ত আলয়ে
অন্তর্যামী জেগে আছে সুখদুঃখ ল’য়ে
যেখানে আমার যত লজ্জা আশাভয়
সদা কম্পমান, পরশ নাহিকো সয়
এত সুকুমার। ছিলে খেলার সঙ্গিনী,
এখন হয়েছ মোর মর্মের গেহিনী,
জীবনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। কোথা সেই
অমূলক হাসিঅশ্রু, সে চাঞ্চল্য নেই,
সে বাহুল্য কথা। স্নিগ্ধদৃষ্টি সুগম্ভীর
স্বচ্ছনীলাম্বর সম; হাসিথানি স্থির,
অশ্রুশিশিরেতে ধৌত পরিপূর্ণ দেহ
মঞ্জরিত বল্লরীর মতো, প্রীতিস্নেহ
গভীর সংগীততানে উঠিছে ধ্বনিয়া
স্বর্ণ-বীণাতন্ত্রী হতে রনিয়া রনিয়া
অনন্ত বেদনা বহি’। সে অবধি প্রিয়ে,
রয়েছি বিস্মিত হয়ে তোমারে চাহিয়ে
কোথাও না পাই অন্ত। কোন্ বিশ্বপার
আছে তব জন্মভূমি। সংগীত তোমার
কত দূরে নিয়ে যাবে, কোন্ কল্পলোকে
আমারে করিবে বন্দী, গানের পুলকে
বিমুগ্ধ কুরঙ্গসম। এই-যে বেদনা,
এর কোনো ভাষা আছে? এই-যে বাসনা,
এর কোনো তৃপ্তি আছে? এই-যে উদার,
সমুদ্রের মাঝখানে হয়ে কর্ণধার
ভাসায়েছ সুন্দর তরণী, দশ দিশি
অস্ফুট কল্লোলধ্বনি চির দিবানিশি