পাতা:চারিত্রপূজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চারিত্রপূজা
৫৫

আকর্ষণ করে, কিন্তু সে-সকল দমকা হাওয়া চলিয়া গেলে সে কথা আর মনেও থাকে না; আবার সেই আহারবিহার আমােদপ্রমোদের নিত্যচক্রের মধ্যে ঘুরিতে আরম্ভ করি।

 ইহার কারণ, মনােজীবন আমাদের মধ্যে পরিণতি লাভ করে নাই —আগাগােড়া বাঁধিয়া যায় নাই। চেতনা ও বেদনার আভাস সে অনুভব করে, কিন্তু তাহার স্থায়িত্ব নাই। অনুভূতি হইতে কার্যসম্পাদন পর্যন্ত অবিচ্ছেদ যােগ ও অনিবার্য বেগ থাকে না। কাজের সহিত ভাবের ও ভাবের সহিত মনের সচেতন নাড়ীজালের সজীব বন্ধন স্থাপিত হয় নাই।

 যাঁহাদের মধ্যে সেই বন্ধন স্থাপিত হইয়াছে, যাঁহারা সেই দ্বিতীয় জীবন লাভ করিয়াছেন, পরমার্থদ্বারা শেষ পর্যন্ত চালিত না হইয়া তাঁহাদের থাকিবার জো নাই। তাঁহাদের একটা দ্বিতীয় চেতনা আছে, সে চেতনার সমস্ত বেদনা আমাদের অনুভবের অতীত।

 বিদ্যাসাগর সেই দ্বিতীয় চেতনা লইয়া সংসারে জন্মগ্রহণ করাতে তাঁহার বেদনার অন্ত ছিল না। চারি দিকের অসাড়তার মধ্যে এই ব্যথিত বিশাল হৃদয় কেবল নিঃসহায়ভাবে, কেবল আপনার প্রাণের জোরে, কেবল আপনার বেদনার উত্তাপে একাকী আপন কাজ করিয়া গিয়াছেন।

 সাধারণ লােকের হিসাবে সে-সমস্ত কাজের কোনাে প্রয়ােজন ছিল না। তিনি কেবলমাত্র পাণ্ডিত্যে এবং বিদ্যালয়পাঠাগ্রন্থবিক্রয়-দ্বারা ধনােপার্জনে সংসারে যথেষ্ট সম্মান প্রতিপত্তি লাভ করিয়া যাইতে পারিতেন। কিন্তু তাঁহার নিজের হিসাবে এ-সমস্ত কাজের একান্ত প্রয়ােজন ছিল; নতুবা তিনি যে অধিক-জীবন বহন করিতেন সে জীবনের নিশ্বাসরােধ হইত— তাঁহার ধনােপার্জন ও সম্মানলাভে তাহাকে রক্ষা করিতে পারিত না।

 বালবিধবার দুঃখে দুঃখবােধ আমাদের পক্ষে একটি ক্ষণিক