পাতা:চারিত্রপূজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
চারিত্রপূজা

তিনি বলেছেন—

সব ঘট একৈ আতমা, ক্যা হিন্দু মুসলমান।

 সেদিন আর এক সাধু, ভারতের পথ যাঁর কাছে ছিল সুগোচর, তাঁর নাম রজ্জব, তিনি বলেন

বুংদ বুংদ মিলি রস সিংধ হৈ, জুদা জুদা মরু ভায়।
অর্থাৎ বিন্দুর সঙ্গে বিন্দু যখন মেলে তখনই হয় রসসিন্ধু,
বিন্দুতে বিন্দুতে যখন পৃথক হয়ে যায় তখনই মরুভূমি প্রকাশ পায়।

এই রজ্জব বলেন—

হাথ জোড়, গুরু সূ হৌঁ মিলৈ হিন্দু মুসলমান।
গুরুর কাছে আমি করজোড় করছি যেন হিন্দু মুসলমান মিলে যায়।

 এই ভারতপথিকেরা যে মিলনের কথা বলেছিলেন সে মিলন মনুষ্যত্বের সাধনায়, ভেদবুদ্ধির অহংকার থেকে মুক্তিলাভের সাধনায়, রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন-সাধনায় নয়। এই ঐক্যের পথ যথার্থ ভারতের পথ। সেই পথের পথিক আধুনিক কালে রামমোহন রায়। তিনিও প্রয়োজনের দিক থেকে নয়, মানবাত্মার গভীরে যে মিলনের ধর্ম আছে সেই নিত্য আদর্শের দিক থেকে ভারতের ইতিহাসে শুভবুদ্ধি-দ্বারা-সংযুক্ত মানুষের এক মহদরূপ অন্তরে দেখেছিলেন। ভারতের উদার প্রশস্ত পন্থায় তিনি সকলকেই আহ্বান করেছেন, যে পন্থায় হিন্দু, মুসলমান খৃস্টান সকলেই অবিরোধে মিলতে পারে। সেই বিপুল পন্থাই যদি ভারতের না হয়, যদি আচারের কাঁটার বেড়ায় বেষ্টিত সাম্প্রদায়িক শতখণ্ডতাই হয় ভারতের নিত্যপ্রকৃতিগত, তা হলে তো আমাদের বাঁচবার কোনো উপায় নেই। ঐ তো এসেছে মুসলমান, ঐ তো এসেছে খৃস্টান—

সাধন মাহি জোগ নহি জৈ, ক্যা সাধন পরমাণ।
ঐতিহাসিক সাধনায় এদের যদি যুক্ত করতে না পারি তা হলে
সাধনার প্রমাণ হবে কিসে?