পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

না জায়গাটা কি রকম। বোলপুরের সঙ্গে এখানকার চেহারার কিছুমাত্র মিল নেই। সেখানকার রৌদ্র বিরহীর মত, মাঠের মধ্যে একা বসে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলচে,— সেই তপ্ত নিঃশ্বাসে সেখানকার ঘাসগুলো শুকিয়ে হলদে হয়ে উঠচে। এখানে সেই রৌদ্র তার সহচরী ছায়ার সঙ্গে মিলেচে, তাই চারিদিকে এত সরসতা— আমাদের বাড়ির সামনে সিসু-বীথিকায় তাই দিনরাত মৰ্ম্মরধ্বনি শুনচি, আর কনকচাপার গন্ধে বাতাস বিহ্বল, কয়েৎবেলের শাখায় প্রশাখায় নতুন চিকন পাতাগুলি ঝিলমিল করচে, আর ঐ বেণুবনের মধ্যে চঞ্চলতার বিরাম নেই। সন্ধ্যার সময় টুকরো চাদ যখন ধীরে ধীরে আকাশে উঠতে থাকে তখন সুপুরি গাছের শাখাগুলি ঠিক যেন ছোট ছেলের হাত নাড়ার মত চাদা মামাকে টী দিয়ে যাবার ইস', করে ডাকতে থাকে। এখন চৈত্র মাসের ফসল সমস্ত উঠে গিয়েচে,— ছাতের থেকে দেখতে পাচ্চি চযা মাঠ দিকপ্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে' আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বৃষ্টির জন্যে। মাঠের যে অংশে বাবলা বনের নীচে চাষ পড়ে নি, সেখানে ঘাসে ঘাসে একটুখানি স্নিগ্ধ সবুজের প্রলেপ, আর সেইখানে গ্রামের গোরুগুলো চরচে। এই উদার-বিস্তৃত চষা মাঠের মাঝে মাঝে ছায়াগুষ্ঠিত এক একটি পল্লী— সেইখান থেকে আঁকাবঁকা পায়ে-চলা পথ বেয়ে গ্রামের মেয়ের ঝকঝকে পিতলের কলসী নিয়ে দুটি তিনটি করে সার বেঁধে বেঁধে প্রায় সমন্ড বেলাই জলাশয় থেকে জল নিতে চলেচে। আগে পদ্মা কাছে ছিল— এখন নদী বহু দূরে সরে গেছে— আমার তেতলা ঘরের জানলা দিয়ে তার একটুখানি আভাস যেন আন্দাজ করে বুঝতে পারি। অথচ একদিন এই নদীর সঙ্গে আমার কত ভাব ছিল— শিলাইদয়ে যখনই আসতুম তখন দিনরাত্তির ঐ নদীর সঙ্গে ই আমার আলাপ চলত। রাত্রে আমার স্বপ্নের সঙ্গে ঐ নদীর কলধ্বনি মিশে যেত আর নদীর কলম্বরে আমার জাগরণের প্রথম অভ্যর্থনা শুনতে পেতেম। তার পরে কত বৎসর বোলপুরের মাঠে মাঠে কাটল, কতবার እ» %