পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটা ইলেকট্রিক পাখা আছে, সেইটে দিন রাত মাথার উপর বোঁ বো করে ঘুরচে– আর আমি কোনোমতে কোলের উপর কাগজ আঁকড়ে ধরে লিখে চলেচি। মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসচে, অক্ষরগুলো বেঁকেচুরে হেলে পড়চে, কোনোমতে ঘুমটাকে ঠেলে ফেলে কলম চালিয়ে যাচ্চি। তোমার পরীক্ষার কাগজ যদি এমন করে এমন জায়গায় লিখতে হত তাহলে প্রথম শ্রেণীতে পাস হতে কি না সন্দেহ। এত করে দুটো লেকচার শেষ হয়েচে। তৃতীয়টার অনেকখানি এগিয়েচে। সবসুদ্ধ ছটা লেকচার লিখতে হবে। অথচ আমার এতে কোনো দরকার ছিল না— বরঞ্চ আমার দরকার ছিল বিশ্রামের। সে জিনিষটা কবে পাব, কোথায় পাব আজ পর্য্যস্ত তার ঠিকানা হল না। যতবার ভাবি আর নয়, ততবার একটা না একটা তাগিদ আসে। কিন্তু আর ভাল লাগচে না। বারবার ইচ্ছে করচে, যে-নিরালা পৃথিবীতে বাঁশি হাতে একদিন এসেছিলুম সেইখানে আবার ফিরে যাই,— একটা জলের ধারা, একটা বালির চর, ওপারে সবুজ বনের ছায়া, উপরে নীলাকাশে সন্ধ্যার একটি তারা— মাঝে মাঝে গল্প করবার একজন লোক পাই ত ভালই, নিতান্ত না পাই ত আমার কল্পনা আছে, থেকে থেকে কলম নিয়ে বসে যাব— কখনো গল্প, কখনো কবিতা, কখনো যা তা বাজে কথা, কখনো বা এইরকম একখানা চিঠি— তার পরে গভীর রাত্রে নৌকোর খোলা জানলার কাছে বিছানার উপর আমার ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন, আর বাইরে অন্ধকারের মধ্যে নদীর কলধ্বনি— কাল যখন ঘন মেঘের ছায়ায় ঘন বনের মাঝখান দিয়ে মোটর চলছিল তখন এই রকমের একটা ছুটির জন্যে মন ভারি ব্যাকুল হয়ে উঠছিল। কাল সিঙ্গাপুরে জাহাজ পৌঁছলে এই চিঠি ডাকে দেব। পশু দিনেই এক জাপানী জাহাজে চড়ে চীনের অভিমুখে পাড়ি দিতে হবে। সিঙ্গাপুর থেকে হংকং যেতে কিছু সময় লাগবে। বোধ হয় একসপ্তাহ। অতএব এর ՀԳԵ