পাতা:চিঠিপত্র (নবম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার ব্যক্তিগত অধিকার খুব কম, অবকাশের তহবিল সম্পূর্ণ আমার জিন্মায় নেই, তাকে যেমন খুসি ব্যয় করতে পারি নে। তোমাদের পূজাৰ্চনার সঙ্গে বিজড়িত দিনকৃত্যের যে ছবি দিয়েছ, তার থেকে নারীপ্রকৃতির একটি সুস্পষ্ট রূপ দেখতে পেলুম। তোমরা মায়ের জাত, প্রাণের পরে তোমাদের দরদ স্বাভাবিক ও প্রবল। জীবদেহকে খাইয়ে পরিয়ে নাইয়ে সাজিয়ে তোমাদের আনন্দ । এর জন্যে তোমাদের একটা বুভুক্ষ আছে। শিশুবেলাতেও পুতুল খেলাতে তোমাদের সেই সেবার আকাজক্ষা প্রকাশ পায় । তোমার বোন যে তোমাকে প্রাণপণে সেবা করত সে তার স্বভাবের গরজে ; না করতে পারলেই তার চিত্ত বঞ্চিত হোতে । ঠাকুরের সেবার যে বর্ণনা করেচ তাতে স্পষ্ট দেখতে পাই সেই মাতৃহৃদয়েরই সেবার আকাঙ্ক্ষাকে বড়ো করে পরিতৃপ্তি দেবার এই উপায়। ঠাকুরকে ঘুম থেকে তোলা, কাপড় পরানো, পাছে তার পিত্তি পড়ে এই ভয়ে যথাসময়ে আদর করে খাওয়ানো ইত্যাদি ব্যাপারের বাস্তবতা আমার মতো লোকের কাছে নেই, তোমাদের কাছে আছে তোমাদের স্ত্রীপ্রকৃতির নিরতিশয় প্রয়োজনের মধ্যে — যেমন করে হোক সেই প্রকৃতিকে চরিতার্থতা দেবার মধ্যে । প্রাণের বেদন যে আমার প্রাণেও বাজে না, তা নয়, কিন্তু সে বেদনা যথাস্থানেই কাজ খোজে, কাল্পনিক সেবায় নিজেকে তৃপ্ত করবার চেষ্টা একেবারেই অসম্ভব । আমার ঠাকুর মন্দিরেও নয়, প্রতিমাতেও নয়, বৈকুণ্ঠেও নয়,– আমার ঠাকুর মানুষের মধ্যে— সেখানে ক্ষুধাতৃষ্ণ সত্য, পিত্তিও পড়ে, ঘুমেরও দরকার আছে— 8२