পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপানী চিত্রকারের চিত্রশালা।
১১৩

 তার পাশেই বুদ্ধদেবের প্রশান্তমূর্ত্তি। ঠিক রেঙ্গুনের মূর্ত্তিগুলিরই অবিকল নকল। এ সকল অঞ্চলে বৌদ্ধধর্ম্ম সম্বন্ধে বর্ম্মার ফুঙ্গীগণই যেন “পোপ” বা শিক্ষাগুরু। চীনেও তাহাই দেখিয়াছি; এই জাপানী ছবিতেও তাহাই দেখিলাম। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কষ্ট ভাবিয়া যেন ধ্যানস্তিমিত নেত্রে জল আসিতেছে। তাঁহার আত্মা কতই মহান ছিল!-অমন মহত্ত্বে আর ইতিহাসে তুলনা নাই। সন্তান-আশায় নিরাশ পিতার বৃদ্ধবয়সের পুত্র-অকালে সহসা প্রসূত হওয়াতে(Precipitate labor) মাতার মৃত্যু ঘটায় আজন্ম মাতৃহীন, -তাঁহার মনে যে দয়া-দৌর্ব্বল্য এত বেশী থাকিবে, তার আর বৈচিত্র্য কি! আজন্ম চিন্তাশীল স্বভাবের উপর আবার কেমন ঘটনাচক্র ঘটিল। যে পথে যান, সেই পথেই বাধা! এক দ্বারে বাৰ্দ্ধক্য, অপর দ্বারে জরা, অন্য দ্বারে মৃত্যু দেখা দিল; শেষে নিষ্কাম যোগীর শান্তমূর্ত্তি চোখের সম্মুখে দাঁড়াইয়া গন্তব্য পথ দেখাইল। সে গতি ত আর রুদ্ধ হইবার নয়! অন্তরের একান্ত আগ্রহে একে একে ক’ত পথই খুঁজিলেন। শাস্ত্রের উপদেশ মুক্তি-পথের সংবাদ দিতে পারিল না। কঠোর তপস্যাতেও শাস্তি আসিল না। ধীর যুক্তিপূর্ণ চিন্তায় সে সমস্যা পূর্ণ হইল। মহান্ জীবনের এই ইতিহাসগুলি সব সেই ধ্যানমগ্ন কাঁদ-কাঁদ মুখ-খানিতে লেখা দেখিলাম।

 তাহার পাশেই দেখি, বিজ্ঞানগুরু হারবার্ট স্পেনসারের সৌম্যমূর্ত্তি অঙ্কিত। চুলগুলি সব পাকা, বৃদ্ধ বয়সেও চক্ষুর জ্যোতি: কিছুমাত্র নিস্প্রভ হয় নাই! ভ্রূযুগল কুঞ্চিত, যেন জ্ঞানজগতের কি তত্ত্ব-উদ্ভাবনে রত। ইনি সমস্ত মানবের বন্ধু, -বিশেষ জাপানের পরম বন্ধু ছিলেন। যেমন হইয়া থাকে, নাস্তিক বিশ্বাসের মধ্যে প্রগাঢ় বিশ্বপ্রেম প্রচ্ছন্ন ছিল। দেহের কান্তি যেন চারি দিকে ছাড়াইয়া পড়িতেছে।

 তার পাশেই টেনিসনের লিখিত কৃষক-তনয়া “ডোরা”র প্রতিকৃতি।