কাঠী করিয়া আফিম এইরূপ মিলাইবার সময় ভাবী ধূমপানের আশায় মুখে আনন্দ আর ধরে না। তখন হইতেই তিনি যেন উত্তেজিত হইয়া কথা বলিতে আরম্ভ করিলেন,—ঘন ঘন হাসিতে লাগিলেন। সেই চোঙ্গাস্থ ফানেলের ভিতর দিয়া এই আফিমটুকুর ধূম পান করিতে হয়। তাহাতে হঠাৎ নেশা এত প্রবল হয় যে, আগে মাদুরে শুইয়া পড়িয়া তবে ধোঁয়া টানিতে হয়। মাথায় থাকে পোরসিলেনের বালিশ, তুলার বা অন্য কোন ও নরম দ্রব্যের বালিশ তখন ব্যবহৃত হয় না। সেই আফিমযুক্ত ফানেলের মুখটী ল্যাম্পের চিমনির উপর ধরিলেই জ্বলিয়া উঠে ও তাহা হইতে প্রচুর ধূম নিৰ্গত হয়; আর ঠিক ইত্যাবসরে নলে মুখ দিয়া সজোরে টানিতে হয়। এক বার আধিবার নয়,—অনেকবার টানা চলে। সে সময়ে ঘরটি ধূমে ধূমাচ্ছন্ন হইয়া যায়। যাহারা অভ্যস্ত নয়, সে ধোঁয়াতে তাদের বিলক্ষণ কষ্টবোধ হয়। যেন দম বন্ধ হইয়া আসে। যেন মাথা ঘুরে আসে। যেন আঘ্রাণেও ঈষৎ নেশা হয়। ধূমপান শেষ হইলে, গরম চা-পান করিয়া কর্ত্তা আবার স্বস্থানে আসিয়া বসিলেম। হঠাৎ নেশার আবির্ভাব হয়, -অল্পক্ষণ মাত্র থাকে, নেশায় অভিভূত হইতে হয় না।
কর্ত্তার ধূমপান শেষ হইলে গৃহিণীও ধূমপান করিলেন। কিন্তু তাঁহার ধূমপান অন্যরূপ। পালিস করা পিত্তল নির্ম্মিত একটি যন্ত্রে তিনি ধূমপান করিলেন। তাঁহার আফিম অত তীব্র নহে। ধূম পানের সময় শুইতে হয় না। এক ছিলিমে একবার মাত্র টানা যায়। পাতলা ধোঁয়া হইতে মধুর গোলাপী গন্ধ ছুটে, অমন মেঘের মত অন্ধকার হয় না। ধূমপান শেষ হইলে আবার গল্প ও মিষ্ট হাসি আরম্ভ হইল। কথা বলিতে বা হাসিতে উচ্চ শব্দ নাই। সকল দেশের ভদ্রবংশীয় ব্যক্তিদের যেমন একটু স্বভাবতঃই আদব-কায়দা দুরস্ত থাকে, তাঁহাদেরও সেইরূপ দেখিলাম। দিনে গুরুতর পরিশ্রমের পর স্ত্রী-পুরুষ, ছেলে-পুলে একত্র