পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
চীন ভ্রমন।

অধীর হইয়া তাহাৱা অহরহ কাঁদে। কখনও কখনও আঙ্গুলগুলি পচিয়া খসিয়া পড়ে। পা এত ছোট করে বলিয়া চীনে স্ত্রীলোকেরা ভাল করিয়া চলিতে পারে না।

 চীনদেশে স্ত্রীলোকদিগকে আত্মহত্যা করিতে প্রায়ই শুনা যায়। শাশুড়ীর অত্যাচারই তাহার একটি প্রধান কারণ। শাশুড়ীর কথায় তাহাদের মরণ-বাচন নির্ভর করে। দুর্ব্বল স্ত্রীলোকের উপর অল্প-বিস্তর অত্যাচার পৃথিবীর সকল প্রাচীন দেশেই প্রচলিত ছিল। এখনও এসিয়ার অনেক দেশে রহিয়াছে। সেই অত্যাচারের অধিকার অক্ষুন্ন রাখা অনেকস্থলেই সামাজিক ধর্ম্মের অঙ্গস্বরূপ। পাশ্চাত্য সমাজের এই একটি বিশেষ গুণ-স্ত্রীজাতির এই হীন, কষ্টকর অবস্থা হইতে কতক পরিমাণে মুক্তিদান। আরমিনিয়া প্রভৃতি এসিয়ার কোন কোন স্থানে পাশ্চাত্য সমাজের অনুকরণে স্ত্রীলোকের যন্ত্রণার অনেক লাঘব হইয়াছে।

 বিধবা স্ত্রীলোকের দ্বিতীয় বার বিবাহ হইবার নিয়ম নাই। তবে দরিদ্রলোকের ঘরে বিধবা-বিবাহ-প্রথা প্রচলিত আছে। যদিও বিধবা-বিবাহ-প্রথা নাই বটে, কিন্তু উপপত্নী ভাবে অন্যের সঙ্গে থাকিবার নিয়ম আছে। তাহাদের গর্ভজাত সন্তান-সন্ততি বিবাহিতা স্ত্রীর গর্ভজাত সস্তান অপেক্ষা হেয় হইলেও আইনানুসারে একেবারে নিরাশ্রয় নহে। তাহারাও মাতার উপপতির বিষয়ের কিছু কিছু অংশ পায়। আবার এদিকে সহমরণের প্রথা ও প্রচলিত আছে। সহমৃতা স্ত্রীলোকের গুণের কথা আর লোকের মুখে ধরে না। আমাদের দেশে যেমন জ্বলন্ত চিতায় প্রবেশপূর্বক সহমরণ হইত, এখানে সেরূপ হয় না। জনসাধারণের সম্মুখে একটী স্থানে দড়ি টাঙ্গাইয়া তাহা দ্বারা গলায় দড়ি দিয়া মরা বা মারা হয়; আর সেই স্থানে পবিত্র স্মৃতি-চিহ্ন স্বরূপ চীন রাজ্যের সরকারী খরচে একটা প্রস্তুরস্তুপ নির্ম্মিত হয়।