পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৮
চীন ভ্রমণ।

জাগে। তার জন্যে যেনে তিনি বড়ই মনোকাষ্টে থাকেন। তাঁহারা সকলেই মিলে-মিশ পরম সুখে আছেন। প্রথম দিন হইতেই তাঁহাদের পরিবারবর্গের সহিত আমার অল্প-বিস্তর আলাপ হইয়াছিন।

 পূর্ব্বেই বলেছি, চীন দেশের স্ত্রীলোকের মত অমন শান্ত লজ্জাশীলা গম্ভীর প্রকৃতির রমণী আমি কোথাও দেখি নাই। আমাদের চ’খে বড়ই ভাল লাগে। তাঁহারা কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাধীন—যেখানে যখন ইচ্ছা, যাতায়াত করিতে পারেন। অথচ আমাদের দেশের স্ত্রীলোকের মত সমাজে অনেক অধিকারেই বঞ্চিত।

 একদিন বৈকালিক চা-পান করিবার সময় সুইচিনের সহিত চীনদেশে স্ত্রীলোকদের অবস্থা সম্বন্ধে কথা কহিতেছিলাম। তিনি বলিলেন, চীনদেশে স্ত্রীলোককে অশেষ যন্ত্রণা সহ্য করিতে হয়। শুধু চীন দেশে কেন, সকল প্রাচীন দেশেই এই প্রথা ছিল। সেখানে শিশু-কন্যা জন্মিলেই সকলেই দুঃখে মৃয়মান হয়। প্রকাশ্যে শিশু-কন্যা জলে ডুবাইয়া মারার প্রথা এখনও সম্পূর্ণ রদ হয় নাই। শিশু বিক্রয় তো প্রায়ই ঘটে। বিবাহ হইলে বধুকে শাশুড়ীর হাতে প্রাণ সমর্পণ করা হয়। তিনি মরিলে, মারিতে পারেন, রাখিলে রাখতে পারেন। স্বামীর স্ত্রীকে ত্যাগ করিবার একটি কারণ, শাশুড়ীর সহিত ঝগড়া ও অপর কারণ, বেশী কথা কওয়া! স্ত্রীলোক বিধবা হইলে তাহার আর বিবাহ হয় না; তবে অপর পুরুষের সহিত বিবাহিতা স্ত্রীর মত থাকা চলে। সহমরণের প্রথাও প্রচলিত আছে। তবে আমাদের দেশে যেমন চিতারোহণে সহমরণ হয়, এ তেমন নহে। এখানে সকলের সামনে গলায় দড়ি দিয়া মরাই প্রথা। বিধবাকে একটী মঞ্চের উপর দাঁড় করাইয়া, তাহার গলায় দড়ি পরাইয়া দিয়া মঞ্চটী সরাইয়া লওয়া হয়; আর সকলের চোখের সামনে উদ্বন্ধনে বিধবার প্রাণ যায়। তাহাতে দর্শকগণ ধন্য ধন্য করিতে