বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
চীন ভ্রমণ।

 প্রথম শ্রেণীর সম্মুখে মালয় দেশীয় এক ডেকযাত্রী ছিল। সে খুব ফর্সা ও তাহার চেহারা উচ্চবংশীয় লোকের মত। মুখ বিষণ্ণ। সে সর্ব্বদাই চুপ করিয়া থাকিত। গরীব না হইলে আর ডেকযাত্রী হইবে কেন? কিন্তু তাহার ভদ্রোচিত অভিমান ছিল। সে এক খানি বেতের ইজিচেয়ার সঙ্গে অনিয়াছিল; তার উপরেই দিনরাত বসিয়া বা শুইয়া থাকিত; কাহারও সহিত মিশিত না। তাহার সঙ্গে তাহার স্ত্রী ও একটি দেড় বছরের ছেলে ছিল। সকলেরই অতি সুন্দর গড়ন এবং ভদ্রোচিত ব্যবহার ও মুখের ভাব। ডেকযাত্রী স্ত্রীলোকদের থাকিবার আলাহিদা স্থান ছিল। সেইখানে তাঁর স্ত্রী ও শিশুর থাকিবার কথা, কিন্তু সে রমণী স্বামীকে দূরে রাখিয়া থাকিতে পারিত না। সেই চেয়ার খানির পাশে এসে সারা দিন বসিয়া থাকিত। পরস্পরে মুখে বেশী কথা হইত না, চাহনিতেই প্রগাঢ় প্রণয় প্রকাশ পাইত। সে ছেলেটির অতি সুস্থ শরীর ও গোল গাল গড়ন। উলঙ্গ কোমরে একগাছি লাল ঘুনশি ও মাথার মাঝে চুলে লাল ফিতা বাধা; বাকী মাথা কামান। সবে চলিতে শিখিতেছে। আধ-আধ বুলি ব’লে দিন রাত সেই ডেকের উপর ট’লে ট’লে বেড়াইত। জাহাজ শুদ্ধ লোক অনিমিষনয়নে চাইয়া থাকিত -আমার ক্যাবিন থেকে ঢুকতে বেরুতে দেখা যাইত- সে দিক দিয়া গেলে আমার সে দৃশ্য হ’তে চোখ আর ফিরিত না। তাদের দু’জনকে দেখলেই আমার মনে হতো, তারা যেন দু’জনে সংসারে একা পড়েছে যেন, যে কোনও কারণেই হোক্, সমাজদ্বারা পরিত্যক্ত।

 দ্বিতীয় শ্রেণীতে দুইটী মগরমণী একত্র থাকিতেন; তাঁহাদের সহিত কোনও পুরুষ ছিল না। খালি পাইলেই তাঁহারা আমাদের ডেক-চেয়ার দখল করিয়া বসিতেন। কাপ্তেনের কুকুরটি লইয়া উচ্চ হাসি হাসিয়া খেলা করিতেন। অনেক রাত্রি অবধি একলা ছাদে বিক্ষিপ্ত পরিচ্ছদ হয়ে অকাতরে ঘুমাইতেন। লজ্জার বড় ধার ধরিতেন