পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩ চুহালি জলপথে ১৬ জুন ১৮৯১ এখন পাল তুলে যমুনার মধ্যে দিয়ে চলেছি। আমার বা ধারে মাঠে গোরু চরছে, দক্ষিণ ধারে একেবারে কুল দেখা যাচ্ছে না। নদীর তীব্র স্রোতে তীর থেকে ক্রমাগতই ঝুপ ঝুপ করে মাটি খসে পড়ছে। আশ্চর্য এই, এত বড়ো প্রকাণ্ড এই নদীটার মধ্যে আমাদের বোট ছাড়া আর দ্বিতীয় একটি নৌকো দেখা যাচ্ছে না— চারি দিকে জলরাশি ক্রমাগতই ছল ছল খল খল শব্দ করছে, আর বাতাসের হুহু শব্দ শোনা যাচ্ছে। কাল সন্ধের সময় একটা চরের উপর বোট লাগিয়েছিলুম— নদীটি ছোট্টো, যমুনার একটি শাখা ; এক পারে বহু দূর পর্যন্ত সাদা বালি ধু ধূ করছে, জনমানবের সম্পর্ক নেই, আর-এক পারে সবুজ শস্যক্ষেত্র এবং বহু দূরে একটি গ্রাম। আর কত বার বলব— এই নদীর উপরে, মাঠের উপরে, গ্রামের উপরে সন্ধেটা কী চমৎকার, কী প্রকাগু, কী প্রশান্ত, কী অগাধ ! সে কেবল স্তব্ধ হয়ে অনুভব করা যায়, কিন্তু ব্যক্ত করতে গেলেই চঞ্চল হয়ে উঠতে হয়। ক্রমে যখন অন্ধকারে সমস্ত অস্পষ্ট হয়ে এল, কেবল জলের রেখা এবং তটের রেখায় একটা প্রভেদ দেখা যাচ্ছিল, এবং গাছপালা কুটার সমস্ত একাকার হয়ে একটা ঝাপসা জগৎ চোখের সামনে বিস্তৃত পড়ে ছিল, তখন ঠিক মনে হচ্ছিল, এ সমস্ত যেন ছেলেবেলাকার রূপকথার অপরূপ জগৎ– যখন এই বৈজ্ঞানিক জগৎ সম্পূর্ণ গঠিত হয়ে ওঠে নি, অল্পদিন হল স্থষ্টি আরম্ভ হয়েছে, প্রদোষের অন্ধকারে এবং একটি ভীতিবিস্ময়পূর্ণ ছমছম নিস্তব্ধতায় সমস্ত বিশ্ব আচ্ছন্ন, যখন সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে মায়াপুরে (نیوی