পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদা P ৬ই মার্চ, ১৮৯৫ । সৌন্দর্ঘ্যের চর্চ ও স্ববিধার চর্চা এর মধ্যে কোনটাকে প্রাধান্ত দিতে হবে তর্কটা যদি এই হয় তবে ছাতা মাথায় দিয়ে ঘোড়ায় চড়ার দৃষ্টান্তটা সে তর্কের মধ্যে ঠিক পড়ে না । কেননা ঘোড়ায় চড়ে ছাত মাথায় দিলে সেটা যে অসুন্দর হতেই হবে তা নয়, ওদিকে তাতে ঘোড় চালাবার অসুবিধাও ঘটতে পারে । আসলে ওটা অসঙ্গত । অসুবিধা, অসৌন্দর্য্য এবং অসঙ্গতি এই তিনটেকেই আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে—কিন্তু বোধহয় শেষটাকেই সব চেয়ে বেশি । মেয়েদের মত সাড়ি পরলে যদি কোনো পুরুষকে স্বন্দর দেখতেও হয় তবু সে অদ্ভূত কাজে না যাওয়াই ভাল। সে সম্বন্ধে লজ্জাট স্বাভাবিক লজ্জা । নিজেকে বেশি করে লোকের চোখে ফেলুতে একটা স্বভাবতই সঙ্কোচ হওয়া উচিত কেননা যথার্থ ভদ্রতার স্বভাবই হচ্চে অপ্ৰগল্‌ভ । যেমন নিজের সম্বন্ধে সৰ্ব্বদা অতিমাত্র সচেতন থাকাটা কিছু নয় তেমনি পরের চেতনার উপর নিজেকে প্রবলবেগে আছড়ে ফেলতে বিশেষ একটা অপ্রবৃত্তি থাকাই উচিত । অবশ্য এর একটা সীমা আছে, কিন্তু সে সীমা অনেক দূরে । যখন কোনো প্রচলিত প্রথাকে আমি অন্যায় বা অনিষ্টকর মনে করি তখন সে বিষয়ে সাধারণকে আঘাত দিতে কুষ্ঠিত হলে চলবে না । কিন্তু সেই উচ্চ লক্ষ্যটা থাক চাই। আমাদের দেশে যে মেয়ের প্রথম জুতা পায়ে এবং ছাত মাথায় দিয়েছেন নিশ্চয়ই তার লোকের বিদ্রুপ-চোখেই পড়েছেন—তাই বলে এখানে লোকব্যবহারকে খাতির করা চলে না । কিন্তু মোটের উপর, সাধারণ মানুষের মত চলার সুবিধা এই যে তাতে অন্ত লোকেরও চলার সুবিধা হয় । ছোটখাটো সুবিধা অসুবিধার জন্ত ও যদি সাধারণের অভ্যাস ও সংস্কারের সঙ্গে বিরোধ করে চলতে হয় তাহলে সেটা ঠিক মশা মারতে কামান পাতার মতই অদ্ভুত হয়ে পড়ে,—সেই অদ্ভুত অসঙ্গতির মধ্যে যে হাস্যকরত ও বিরক্তিজনকতা আছে তাকে অতিক্রম করবার উপযুক্ত কোনো উচ্চ অভিপ্রায় তার মধ্যে পাওয়া যায় না । -