পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
ছিন্নমুকুল

হিরণ তাঁহার মনোভাব বুঝিয়া ত্রস্তে সরিয়া দাঁড়াইলেন। মুহূর্ত্তের মধ্যে যামিনী আত্মস্থ হইয়া বুঝিলেন— পিস্তল কাড়িতে গেলেই যথার্থ দোষী বলিয়া প্রমাণিত হইবেন, অথচ কৃতকার্য্য হইবারও সম্ভাবনা নাই। তিনি হৃদয়ের ভাব লুকাইয়া সরোষে বলিলেন “এ কি? কি আশ্চর্য্য? চুরীর পিস্তল আপনি পেলেন কোথা?”

 তাহার অতিরিক্ত সাহস দেখিয়া হিরণ একটু হাসিয়া বলিলেন “চুরীর জিনিষ! সে প্রমাণে যা হয় হবে।”

 যা। কি প্রমাণ? আপনি যা বলেছেন তাইত প্রমাণ সাপেক্ষ। আপনার হাতে চোরা মাল আমিই এখনি আপনাকে চোর বলে ধরব।

 হি। প্রমাণসাপেক্ষ বটে! কিন্তু প্রমাণের অভাব নেই। আপনার আগেকার চাকর রামধন সর্দারকে মনে আছে ত? সে হাজির।

 হিরণ সেই ভৃত্যের জন্য একবার এদিকে ওদিকে চাহিয়া দেখিলেন— কিন্তু তাহাকে কাছাকাছি দেখিতে পাইলেন না। কোথা হইতে এ সমস্ত প্রকাশ হইয়াছে যামিনী তখন বুঝিলেন, বুঝিয়া সক্রোধে বলিলেন “তাকে চোর বলে তাড়িয়ে দিয়েছি— সে মিথ্যা করে কি না বলতে পারে? কিন্তু তার মিথ্যা অপবাদে আমার কিছুই হবে না — সে জন্য আমি কিছুমাত্র ভীত নই”

 হি। না তা ভীত হবেন কেন? শুধু এ খুনের কথা নয়—নীরজার হরণ বৃত্তান্তও প্রকাশ হয়েছে। আজ রাতেই আমি প্রমোদকে চিঠি লিখব। সেখানেও আর আপনার স্থান নেই জানবেন। প্রমোদ যদি এখনো এ সব জেনে না থাকেন ত আজই জানবেন।

 যামিনী বুঝিলেন—সে কথা প্রমোদ তবে এখনও শুনেন নাই। একটুখানি যেন তাহাতে আশ্বস্ত বোধ করিয়া কহিলেন, “যদি নিতান্তই নিজের মন্দ করতে ইচ্ছা হয়ে থাকে ত আমার নামে মিথ্যা দোষ আনবেন, যা করতে ইচ্ছা হয় করবেন। এখন আমি চল্লেম, এ রকম অপমান