পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১৩৪

 বিদ্যুৎ বলিল—আমি যাইনি কাকা, সেবার সেই বারণ করে দেওয়ার পর থেকে আর কক্ষনো যাই নি।

 এ কথাটি বিদ্যুৎ মিথ্যা বলিল। সুশীলের সঙ্গে তার ছেলেবেলা হইতেই আলাপ। সুশীল যখন কলেজে পড়িত, তখন বিদ্যুৎ বার তের বছরের মেয়ে। সুশীলদা’র দেখা পাইলে তখন হইতেই সে আর কোথাও যাইতে চায় না।

 সুশীলের সঙ্গে তাহার বিবাহ হওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না, কারণ তাহারা বৈদিক আর সুশীলেরা রাঢ়ীশ্রেণী। বিদ্যুতের বিবাহ হইয়াছিল পাশের গ্রামের শ্রীগোপাল আচার্যের সঙ্গে। বিদ্যুৎ বিধবা হইয়াছে বিবাহের দু’ বছর পরেই। শ্বশুরবাড়ি মাঝে মাঝে যায়, কিন্তু বেশির ভাগ এখানেই থাকে। সুশীলের সঙ্গে তাহার ছেলেবেলার মাখামাখি লইয়া একটি অপবাদ গ্রামের মাঝে রটিয়াছিল। এই অপবাদের দরুণই তাহারা এখন গ্রামে একঘরে হইয়া আছে, এ বাড়িতে তাহাদের নিমন্ত্রণ হয় নাই।

 ইতিমধ্যে ঝুমুর গানের দল আসিয়া হাজির হইল। সামিয়ানার একধারে ইহাদের জন্য স্থান নির্দিষ্ট ছিল, গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা, দল আসিতেই সেখানে গিয়া জায়গা দখল করিয়া বসিবার জন্য হুড়াহুড়ি বাধাইয়া দিল। কেশব ছুটিয়া গেল গোলমাল থামাইতে। দলের অধিকারী বলিল—ও সরকার মশাই, আমাদের একটু তামাক-টামাকের যোগাড় করে দিন, আর দু-পাঁচ খিলি পান। রোদ্দুরে বামুনগাঁতির বিল পার হতে যা নাকালটা হয়েচে সবাই মিলে!

 বেলা বারোটার সময় কেশব একবার বাড়ির মধ্যে ঢুকিল। স্ত্রীর জন্য তাহার মনটা চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে। আহা, বেচারী