পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৯
অরন্ধনের নিমন্ত্রণ 

 হীরু চাকরিতে খুব উন্নতি ক’রে ফেলেচে তার সুন্দয় চরিত্রের গুণে। চিফ্ ইঞ্জিনীয়ারের আপিসে বদলি হ’ল দেড়শো টাকায় মার্চ মাস থেকে।

 হীরু আর সেই হীরু নেই। এমনি হয়, এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। প্রতিদিন, প্রতি মাস, প্রতি বৎসর, তিলে তিলে মানুষের দেহের ও মনের পরিবর্তন হচ্চে—অবশেষে পরিবর্তন এমন গুরুতর হয়ে ওঠে যে, বহুকাল পরে আবার সাক্ষাৎ হ’লে আগের মানুষটিকে আর চেনাই যায় না। হীরু ধীরে ধীরে বদলেচে। অল্প অল্প ক’রে সে কুমীকে ভুলেচে। রামকৃষ্ণ আশ্রমে যাবার বাসনাও তার নেই বর্তমানে। এর মূলে একটা কারণ আছে, সেটা এখানে বলি। জামালপুরে একজন বয়লার-ইনস্পেক্টার ছিলেন, তাঁর বাড়ি হুগলী জেলায়, রুড়কীর পাস ইঞ্জিনীয়ার, বেশ মোটা মাইনে পেতেন। কিন্তু অদৃষ্টের দোষে তাঁর দুটি মেয়ের বিয়ে দিতে তাঁকে সর্বস্বান্ত হ’তে হয়েছে। এখনও একটি মেয়ে বাকি।

 হীরুর সঙ্গে এই পরিবারের বেশ ঘনিষ্ঠতা জন্মেছিল। সুরমা হীরুর সামনে বার হয়, তাকে দাদা ব’লে ডাকে, কখনও কখনও নিজের আঁকা ছবি দেখায়, গল্প করে, গান শোনায়।

 একদিন হঠাৎ হীরুর মনে হ’ল— সুরমার মুখখানা কি সুন্দর! আর চোখ দুটি—পরেই ভাবল—ছিঃ, এসব কি ভাবচি? ও ভাবতে নেই।

 আর একদিন অমনি হঠাৎ মনে হ’লো—কুমীর চেয়ে সুরমা দেখতে ভালো—কি গায়ের রং সুরমার! তখনই নিজের এ চিন্তায় ভীত ও সঙ্কুচিত হ’য়ে পড়ল। না, কি ভাবনা এসব,