পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

না । বরং ব্যাঙ্কের লোহার সিন্দুক কথা বলে, কিন্তু দ্বারকা সাতরা কখনোও না । ভাবতে-ভগবতে নিশীথ একশ টাকার নোটের মোটা-মোট তাড়াগুলো সব কটা মনিব্যাগের ভিতর যেমন ছিল, ভরে ফেলতে লাগল। কী হবে এ সৰ টাকা নিয়ে ? এ সব টাকা দিয়ে কী করবে সে ? কলকাতার বাংলাদেশের বেকার মাস্টার গরিব মাস্টার অধ্যাপকদের জন্যে দানসত্র খুলবে ? কিন্তু এ ত শিশির বিন্দু, সমুদ্রের প্রয়োজন ! কোটি-কোটি টাকার দরকার এ দেশের শিক্ষণকে সম্মান ও শক্তি দিতে হলে, যারা শিক্ষণ দেবে প্রাণশক্তি ও মর্যাদায় তাদের স্বাধীন ও সরস সফল করে তুলতে হলে । জিতেনের টাকা সে নিতে পারে—উটপাখির মত চোখ বুজে নিতান্ত নিজের দরকারে । পৃথিবীর কথা ভাবতে গেলে চলবে না ; পৃথিবী এর, ওর, তার, নয় —ইতিহাসের সকলেরই নিজের জিনিস। যে-সূর্য নিভে যাচ্ছে, যে-সময় মানুষকে ধ্বংস করে ফেলবে একদিন—এইসব বড়-বড় ব্যক্তির লীলার জিনিস পৃথিবী । একজন মানুষ, একটা দল, একটা দেশ, বা মহাদেশ কী করে সুনিয়ন্ত্রিত করবার শক্তি পাবে পৃথিবীকে । মানুষের মন উন্নত হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু দু-পাচ দুশ-পাচশ বছরের মধ্যে তো নয়ই, কত সময় লাগবে কে জানে—কিন্তু সে সফলতা নাও লাভ করা যেতে পারে—মানুষের পৃথিবীতে কোনো দিনই । অাজকের পৃথিবীর এ-রকম ভয়ঙ্কর বিস্রস্ত প্রস্থানের ভিতর ব্যক্তি নিজের শুভার্থ ছাড়া আণর কী কামনা করতে পারে—কী মানে আছে অন্য কোনো কামনার ? নিশীথ ভাবছিল, ব্যক্তি সে, অতিস্তনিত সমুদ্রের ভিতর ফেনার গুড়ির মতন অনেকটা, প্রতিটি ফেনগর গুড়িকে যদি দান করা যায় ভেবে দেখবার শক্তি, তা হলে ব্যাপারটা যে-রকম চাছাছোলা নিষ্ঠুর হয়, পৃথিবীতে প্রতিটি ব্যক্তির জীবন অণজ সেই রকমই তো । এ অবস্থায় কী করতে পারে, ফেনগর গুড়ির মত মানুষ, প্রতি মুহূর্তেই টালমাটাল সমুদ্রের রাক্ষসে শক্তির আক্রোশ থেকে নিজেকে নিজের পরিবারকে সামলানো ছাড়া ? সেটুকুও কি পারবে মানুষ ? কে পারছে ? কত কম লোক পারছে ? কত কম ব্যক্তি নিজেকে বণচণতে, অল্পবিস্তর সুস্থ রাখতে পারছে—পৃথিবীর বা রাষ্ট্রের টাল সামলে সেটাকে সুস্থ করে তোলবণর শক্তি তার অাছে এ যদি সে মনে করে থাকে তবে মিথ্যে তণর মন । কে শুনবে এই বোকা মিথ্যার্থীকে । নিশীথের মনে হচ্ছিল একটা বিষম دادها