পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গেছ মনে করো না কিন্তু’— ‘তোমাদের ভেতর এক জন হয়ে গেছি ? মানেটা ঠিক বুঝলাম না সুলেখা । ‘তোমাকে হরীত ডেকে খেলো করছি না । তোমাকে আমরা মর্যাদণ দিচ্ছি।” ‘জোর করে ? হরীত মুখ ভারী করে হেসে বললে । ‘না । যা প্রাপ্য তার চেয়ে কম দিচ্ছি ; আমি অনেক কম, জুলেখা আমার চেয়ে বেশি দিচ্ছে । দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছ কেন ? ‘তুমিও তো দাড়িয়ে আছে।’ ‘চল, ঘরের ভেতরে যাই ।” এই বারান্দায়ই ভাল, বেশ বাতাস, আলো, ঘাস, আকাশ, ক্যানাফুল । গোট। তিনেক বেতের চেয়ার এনে বসলে হয় এখানে ৷” ‘তিনটে কেন ? আমরা তো দু-জন ।’ 'জুলেখা তো আসছে বলে গেল।’ সুলেখা একটু ঘাড় কাত করে দু-তিনটে লম্বা কাল চুল মাথার থেকে মুখের, গালের, ওপর দিয়ে নীচের দিকে টেনে বীণর তারের মত টান করে রাখতেরাখতে বললে, ‘ও, তার কথা ভাবছ বুঝি তুমি ? ‘কোথায় গেল তোমার দিদি ? ‘আমি দেখি নি তো !’ “এ বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও ? আমি দেখি নি’—বীণার তারের মত টান-টান রেশমি চুল কটা ছেড়ে দিয়ে মাথায় একটা বাকুনি দিয়ে সুলেখা বললে । ‘আসবে তো জুলেখা ? ‘তুমি যদি সকালবেলা আসতে—জুলেখা তো ছিল বাড়ি সমস্তটা সকাল । কেমন যেন অত্যধিক সারল্যে জুলেখার কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিল হারাত ; ঠিক ততটা সরল না হয়ে উত্তর দিয়ে হারীতের অতীত ঐ বাইরের পৃথিবীটার দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইল সুলেখা । হগরীত তাকিয়ে দেখল, অনেকগুলো বোলতা ওড়াউড়ি করছে রোদের ভেতর । বাতাসে টগল সামলাতে না পেরে হিল্লোলিত হচ্ছে, ছটকে যাচ্ছে, ছিটকে পড়ছে, একেবারে সুলেখার মুখের ওপরেই এসে পড়েছে যেন একটা ; ঠিকরে পড়ল বাতাসের আর-একটা ঝটকায় সুলেখার গালের ওপর— 'ෆo8