পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাংস আছে, টিন খুলবার হাঙ্গামার মধ্যে গেল না সে । জল খেল । সব জলই বরফ মেশানো যেন । খেতে-খেতে একেবারে অন্তঃস্থল তলিয়ে স্নিগ্ধ হয়ে উঠতে থাকে, কেবলই খেতে ইচ্ছে করে, কেবলই স্নিগ্ধ হয়ে পড়তে । খেল সে, জল খেতে লাগল অতল জলের মত যেন । কণরলসবগড, সোয়াপ্লে, বায়রনের জল হয়ে গিয়ে বরফ গলিয়ে । বসন্তের রাতে সাদা বরফে ঢাকা হিমানীর মত লাগল নিজের শরীরটাকে, নিজের অন্তরণ স্মণকে । নীচে চলে গেল নিশীথ । মশারি টানিয়ে শুয়ে পড়ল । জিতেন পাচটার সময় তার ঘুমের মেয়াদ কাটিয়ে উঠল । যেন জেগেই ছিল সে । না তা নয়, খুব বেহু’শ হয়েই ঘুমুচ্ছিল । কিন্তু এ সব লোককে ঠিক সময়ে ঠিক কাজ করতে হয় । পাচটার সময় ঘুম না-ভেঙে পারে না তার । সাতটার সময় অফিসে যেতে হবে আজ ; জিতেন একটা হাই তুলতে নাতুলতেই দোলের ঘড়িতে ঢং ঢং করে পাচটা বাজল । ঘরে মৃদু স্নিগ্ধ সবুজ বাতি জ্বলছে । সমস্ত শরীর বেশ ঠাণ্ড লাগছিল জিতেনের । রণত তিনটেচারটের সময় মখমলের চাদরটা গয়ে জডিয়ে নিলে হত, কিন্তু ঘুম ভাঙে নি । সমস্ত লম্বণ আঁ{ট ঠাণ্ডা শরীরটার দিকে নজর পড়ল । পাশে ছিমছাম দীর্ঘ ফর্শী শরীরটার দিকে তাকিয়ে দেখল । নাঃ, আর দেরি করা যায় না। স্ত্রীকে জাগানো চলে না । ঘুমুচ্ছে, ঘুমোক । অনেক রণত জেগেছে । ডাইনিং হলে একটা শব্দ হচ্ছে না ? ইঁদুর ছোটাছুটি করছে বটে । ইদুর মারবার জার্মান মেশিনের কথা ভাবছিল দাশগুপ্ত । ছোটবেলার তার ন-কাকা দুরমুস দিয়ে ইদুর সাবাড় করে ফেলত। জিতেনের বাবার চোখে সে সব পড়লে ন-কণকণকে বডড নাকাল হতে হত ; মাছ-মাংস খেতেন না বাবা, কোনো প্রাণীকেই মৃত্যুবাথা দিতে রাজি ছিলেন না । মাঝে-মাঝে কেবলমাত্র ছারপোকা মারতেন । তাও নিজের হাতে না । বাবাকে চেয়ার, কুশন, খাট, ক্যাম্পখাটের থেকে ছারপোকা ঝেড়ে ফেলতে দেখলেই জিতেন, হিতেন, ঋতেন গিয়ে হাজির হত সেখানে ; এর চেয়ে মজার জিনিস তখনকার জীবনে খুব বেশি ছিল না তাদের ; ছারপোকা ঝেড়ে খসিয়ে বণর করে দিতেন তিনি, মারপর পালা ছেলেদের হাতে । খাবারের ঘরে বেড়াল’, বললে জিতেন দাশগুপ্ত, তার ঘুমন্ত স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে, বেড়গল ছাড়া ও-রকম শব্দ হয় না । ইদুরগুলোও খুব ধাড়ি হয়ে গেছে २6