পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলব্ধি পৃথিবীতে আর কিছু আছে কি ? অবিশ্ব্যি, আট বছর আগের ধারণা আমার অন্য রকম ছিল । তখনে আমি বিবাহ করি নাই। মনে হইত বধূকে দিয়া পা টিপাইয়া লইব, কপালে চুল বুলাইয়া দিবে সে, পাখা দিয়া বাতাস করিবে— অণরো কত কী ! কিন্তু তুমি যখন আমার জীবনে আসিলে, দেখিলাম, এ সব কিছুই কারলে না তুমি ; আমিও চাহিলাম না । ধীরে-ধীরে হৃদয়ের ভিতর সাপ-খেলানে বঁশির সুর কেমন যেন বাজিয়া উঠিল আমার । বুঝিতে পারিলাম না, এ সুর কাহার নিকট হইতে আসে । দিন-রণত্রির ভিতর হইতে, গ্রামের পথের প্রান্ত হইতে, উলুখড়ের জঙ্গল হইতে, আকাশ হইতে, নিস্তব্ধ অপরূপ ছুপুর বেলার বুক হইতে, এ সুর কে যে পাঠায় ভাবিয়া-ভাবিয়া অবাক হইয়া যাইতাম । কিন্তু কেমন অচেনা গভীর ; বড় ভাল লাগিল আমার । কোনোদিন কাহাকেও ভালবাসিয়াছিলাম, হরিণইয়া ফেলিয়াছি—এ কি তাহারই হলাদিনী ? না, তা নয়। এ তুমিও নও—আমিও নই ; এ শুধু দিন-রাত্রির গভীর রঞ্জনী ধ্বনি—অনন্ত অপরিসীমের দিকে চলিতে-চলিতে নগরিকেলের পাতায়, চিলের ধবল গলায় খয়েরি ডানায়, ভোরের নৌকার রঙিন পালে, খর রৌদ্রে, মেঘনা-ধলেশ্বরীর স্ফীত স্তনের বন্যায়, মধুকুপী ঘাসে, কাশের সমুদ্রে, দ্রোণফুলের ভিড়ে, মৃত রূপসীর ললাটের সিন্দুরে, গোধূলির মেঘে, শীতসন্ধ্যার কুয়াশায়, স্থবিরের বিষন্ন চোখের নিজান স্বপ্নতত্তর ভিতরে, তাহারা যে সুর বাজাইয়া যায়—এ শুধু তাহারই ধ্বনি । এ সুর তোমার জীবনে আছে কী না জানি না ; যদি না থাকে – আহরণ করিয়া লও, জীবনে এক গভীর অবলম্বন পাইবে । চিঠিখান এই পর্যন্ত লিখিয়া রাখিয়াছিলাম। দুপুর বেলা। করমচা, কুল, কদমের জঙ্গলের ভিতর হইতে নিরবচ্ছিন্ন ঘুঘুর ডাক আসিতেছে—শুনিতে-শুনিতে অন্যমনস্ক হইয়া পড়িতে হয় । কলম রাখিয়া দিয়া অনেক ক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়াছিলাম। তার পর কলম তুলিয়া লইয়া ধীরে-ধীরে লিখিতে লাগিলাম আগবার । BSNల