পাতা:জীবনী সংগ্রহ - গনেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3 or জীবনী-সংগ্ৰহ। চলিয়া গিয়াছিলেন, রামপ্রসাদ তাহা জানিতেন না ; তিনি পূর্বের ন্যায় বেড়া বঁাধিতেছিলেন। জগদীশ্বরী ফিরিয়া আসিয়া বেড়া বাধা অনেক । হইয়াছে দেখিয়া, কে দড়ি ফিরাইয়া দিতেছিল, জিজ্ঞাসা করিলেন। তখন রামপ্রসাদ বলিলেন, “কেন মা ! তুমিই তা দড়ি ফিরাইয়া দিতে ছিলে ?” পিতার কথা শুনিয়া জগদীশ্বরী বলিলেন, “না, আমি বাড়ী গিয়াছিলাম।” তখন রামপ্রসাদ বুঝিলেন যে, স্বয়ং দেবী তাহার কন্যারূপে দড়ি ফিরাইয়া দিতেছিলেন। এক দিবস রামপ্রসাদ গঙ্গাস্নান করিয়া বাটীতে আসিয়া শুনিলেন যে, একজন স্ত্রীলোক বহু দূর হইতে র্তাহার গান শুনিতে আসিয়াছেন। তিনি চণ্ডীমণ্ডপে বসিয়া আছেন। রামপ্ৰসাদ চণ্ডীমণ্ডপে গিয়া দেখিলেন, তথায় তিনি নাই, কেবল দুইটী বালিকা খেলা করিতেছে। রামপ্রসাদ উহাদিগকে স্ত্রীলোকটির কথা জিজ্ঞাসা করিলে, তাহারা বলিল, “হঁা একটী মেয়ে মানুষ আসিয়াছিল, সে তোমায় কাশীতে গিয়া গান শুনাইতে বলিয়া গিয়াছে।” রামপ্রসাদ বুঝিতে পারিলেন যে, কাশী হইতে স্বয়ং অন্নপূর্ণ তঁহার গান শুনিতে আসিয়াছিলেন। রামপ্ৰসাদ তখনই আর্দ্র বস্ত্ৰে মাতাকে সঙ্গে লইয়া “মন চলরে বারাণসী” ইত্যাদি গান করিতে করিতে কাশী-যাত্ৰা করিলেন। তিনি ত্ৰিবেণীর নিকটস্থ কোন গ্রামে সে রাত্রি অবস্থান করিলেন। সেই রাত্রিতে অন্নপূর্ণ র্তাহাকে স্বপ্নে এই জানাইলেন যে, “রামপ্রসাদ ! তোমায় আর এখানে আসিতে হইবে না, তুমি ঐ স্থানে থাকিয়াই আমায় গান শুনাও।” রামপ্ৰসাদ তাহাই করিলেন। কালী-কীৰ্ত্তন, কৃষ্ণকীৰ্ত্তন ও বিদ্যাসুন্দর এই তিনখানি কবিরঞ্জন রামপ্ৰসাদ প্ৰণয়ন করেন। ঐ তিনখানি পুস্তকের মধ্যে কালীকীৰ্ত্তনই সর্বোৎকৃষ্ট । কালী-কীৰ্ত্তন পাঠ করিলে ভাবিজ্ঞজনের মনে যারপরনাই ভক্তিরসের সঞ্চার হয়।