পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গ্রহণ করেন। সমগ্র ভারতবর্ষ পরিক্রমার পর ব্লভাট্‌স্কি ১৮৭৩ সনে আমেরিকা গমন করেন। সেখানে অধ্যাত্মতত্ত্ববিদ্ কর্ণেল অলকটের সঙ্গে তাঁহার পরিচয় হয়। মার্কিন জাতিভুক্ত হইয়া ব্লভাট্‌স্কি একক্রমে ছয় বৎসর নিউ ইয়র্কে অবস্থান করেন। ব্লভাট্‌স্কি ও অলকট উভয়ে মিলিয়া ১৮৭৫ সনে থিয়সফিক্যাল সোসাইটি স্থাপন করেন। এই সোসাইটি কোন বিশেষ ধর্ম প্রচার না করিয়া সদস্যগণকে নিজ নিজ ধর্মে আস্থাবান হইবার জনা উপদেশ দিতেন। সোসাইটি বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মধ্যে ভ্রাতৃভাবের উদ্রেকের নিমিত্ত যত্নপর হইলেন। এতদৃশ আদর্শের প্রতি বিভিন্ন দেশের সুধীগণ স্বতঃই আকৃষ্ট হন। মাদাম ব্লভাট্‌স্কি অলৌকিক শক্তি ও অবিশ্বাস্য কার্যকলাপের প্রচারে এদেশবাসীরাও তাহার প্রতি সবিশেষ আকৃষ্ট হন। তিনি কর্নেল অলকট-সহ ভারতবর্ষে আসিবার পর শিক্ষিত সাধারণ কর্তৃক সম্বর্ধিত হইলেন। শুনা যায়, তিব্বতী গুরু সূক্ষদেহে আসিয়া ব্লভাট্‌স্কির সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করিতেন। ভারতবর্ষে সোসাইটির কেন্দ্রস্থল প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি গুরু-কর্তৃক আদিষ্ট হইয়াছিলেন। মাদ্রাজের আডিয়ারে তখন থিয়সফিক্যাল সোসাইটির কেন্দ্র স্থাপিত হয়। সমগ্র জগতে সোসাইটির কেন্দ্রস্থল এই আডিয়ার। ব্লভাট্‌স্কির অলৌকিক ক্রিয়াকলাপে অনেকেই ক্রমে সন্দিহান হইয়া উঠেন। সংবাদপত্রেও তখন ইহার সমালোচনা হয়। এই পুস্তকে থিয়সফিক্যাল সোসাইটি ভাঙনের কথা যে বলা হইয়াছে তাহা এ সময়কার ঘটনা। স্বর্ণকুমারী দেবী প্রমুখ সভ্রান্ত মহিলারা থিয়সফিক্যাল সোসাইটির সংস্রব ত্যাগ করেন। তিনি সোসাইটির সদস্য মহিলাদের লইয়া সখি-সমিতি স্থাপন করেন (১৮৮৬)। মাদাম ব্লভাট্‌স্কি ১৮৮৭ সনে ইংলণ্ডে চলিয়া যান। সেখান হইতে তিনি অধ্যাত্মবিদ্যা সম্পর্কীয় একখানি পত্রিকা সম্পাদনা করিতে থাকেন। অধ্যাত্মবিদা সন্ধে তাঁহার কয়েকখানি পুস্তকও রহিয়াছে। বিলাতে অবস্থানকালে তাঁহার নিকট এনি বেসাণ্ট থিয়সফি-মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ভারতবর্ষের ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি, ঐতিহোর প্রতি বিশ্ববাসীর আগ্রহের মূলে থিয়সফিক্যাল সোসাইটির কৃতিত্ব অসামান্য।


 কর্নেল অলকট: পুরো নাম কর্নেল এইচ. এস, অলকট। অলকট ছিলেন আমেরিকার অধিবাসী। তিনি মাদাম ব্লাভাট্‌স্কির সঙ্গে ভারতবর্ষে আগমনান্তর বরাবর এদেশেই বাস করেন। তিনি থিয়সফিস্ট সোসাইটিকে দৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপনমানসে সর্বশক্তি নিয়োগ করিয়াছিলেন। অলকট সোসাইটি-কর্তৃক প্রকাশিত 'থিয়সফিস্ট' পত্রিকা যোগ্যতার সহিত সম্পাদনা করিয়া গিয়াছেন। তিনি নিজে ছিলেন বৌদ্ধ- ধর্মাবলম্বী, তথাপি হিন্দুধর্মের মূল তত্ত্ব যাহাতে সর্বসাধারণের হৃদয়ঙ্গম হয় সেজন্য নানাভাবে যত্ন লইয়াছিলেন। থিয়সফিক্যাল সোসাইটির গ্রন্থন-বিভাগ ভারতীয় ধর্ম, সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রচারে সবিশেষ তৎপর হয়। কর্নেল অলকটও অলৌকিক ক্রিয়াকলাপ দেখাইতে পারিতেন। অলকট কিছুকাল পর্যন্ত থিয়সফিক্যাল সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। ১৯০৭ সনে তাঁহার মত্যু হয়।

 সখিসমিতি: মহিলা থিয়সফিস্ট সভা ভাঙিয়া গেলে সভানেত্রী স্বর্ণকুমারী দেবী ইহার সভ্রান্ত মহিলা সদসাদের লইয়া ১৮৮৬ সনে ‘সখিসমিতি' স্থাপন করেন। এই নামটি রবীন্দ্রনাথের দেওয়া। প্রতিষ্ঠার দুই বৎসর পরে প্রকাশিত সখিসমিতির একটি বিবরণীতে ইহার উদ্দেশ্য এইরুপ বিবৃত হইয়াছে:

 “অসহায় বঙ্গবিধবা ও অনাথা বঙ্গকন্যাগণকে সাহায্য করা এই সমিতির প্রধান উদ্দেশ্য।

 “আবশ্যক অনুসারে দুই উপায়ে এই সাহায্য দান হইবে। বিধবাই হউন আর কুমারীই হউন, যিনি নিরাশ্রিত, যাঁহার কেহ নাই, বা যাঁহার অভিভাবকেরা নিতান্ত সঙ্গতিহীন তাঁহাদের অভিভাবকদের সম্মতিক্রমে সখিসমিতি কোন কোন স্থলে

২২০