বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করত। তার যে এ কি অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে ভেবে দিশেহারা হয়ে যায় বাড়ীর লোক। ধরণীর প্রচণ্ড শাসনে দু-একটা দিন ভাল ফল দেখা যায়, স্কুল থেকে সময়মত বাড়ী ফেরে, বিকালে খেলে বেড়িয়ে এসে সন্ধ্যা বেলা পড়তে বসে। পরদিনই হয়তো দশটায় খেয়ে দেয়ে স্কুলে গিয়ে ফেরে রাত দশটায়, বিকালে জলখাবার খেতেও বাড়ী আসে না। নরেশের জন্য একটু করুণার প্রশ্ৰয় দেওয়া প্রেমের ভাব আছে পাকার। পাকার অবহেলা নরেশ সইতে পারে না, অন্য কারে সঙ্গে পাকার বেশি। ঘনিষ্ঠতা দেখলে সে ঈর্ষায় জলে যায়। মাঝে মাঝে দারুণ অভিমানে সে পাকাকে বর্জন করে। কিন্তু বাপের ভয়ে যদি বা দু-চার দিন দূরে থাকতে পারে, নিজের অভিমান নিয়ে একটা দিনও পারে না । মান অভিমান বিসর্জন দিয়ে পাকার কাছে ছুটে যায়। পাকা কড়া কথা বললে পাংশু বিবৰ্ণ হয়ে যায়। তার মুখ। দেখে বোধ হয় খুশিই হয়। পাকা । ছেলের বন্ধুদের তামাক টানার আসরে ধনেশ এসে উকি দেয়। তার মুখভরা খোচা খোচা গোফ-দাড়ি, কেঁচা দিয়ে আট হাতি ধুতি পরা। সে সাগ্রহে সবিনয়ে বলে, বাবার, শনিঠাকুরের পেসাদ পেয়ে যেতে হবে। ঘর দিয়ে এনে দেবার জো নেই পেসাদ, ভেতরের উঠানে একবারটি যেতে হয়। তিনুর হাতে হুকো ছিল, নামিয়ে রাখে। তার তামাক খাওয়ায় ধনেশের অনুমোদন আছে। স্কুলে না পড়লে হয়তো এ বয়সে তামাক ধরা নিয়ে একটু খিটমিটি বাধাতো, কিন্তু ইস্কুলের উচু ক্লাসে পড়ে ছেলে, তার চেয়েও ছেলের আজ বিদ্যা বেশি, তামাক ধরার বয়স তার অবশ্যই হয়েছে। স্কুলের ছুটির দিন এক সঙ্গে ভাত খেয়ে উঠে তামাক খেয়ে আজকাল সে ছেলের জন্য হুকোটা দেয়ালে ঠেস দিয়ে রেখে উঠে আড়ালে সরে যায়। নিকানো উঠানের একপাশে শনি-ঠাকুরের পূজার ব্যবস্থা, বেঁটে ফরসা নন্দ ঠাকুর পুরোহিত। পাকা বলে, কেমন আছেন। পুরুত ঠাকুর ? কেউ পুরুতে বললে নন্দ ঠাকুরের ভীষণ রাগ হয়, সঙ্গে সঙ্গে দশটা সংস্কৃত শ্লোক আউড়ে প্রায় গায়ের জোরে বুঝিয়ে দেয় যে, লে কুলীন বামুন, পুরুতি নয়। Sir