বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জীয়ন্ত - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেরামত করতে, মাছ ধরতে, কাঠ চিরাতে, রাস্তা। সারাতে, গাড়ি হাকাতে, মোট বইতে, চামড়া পাকাতে, বেসাতি নিয়ে এসে বাজারে বসতে জোরদার বলাবলির সময় বা সুযোগ কম, কাজ শেষের ক্লান্ত অবসরেও পেট-বুকের ভালমন্দের কথায় বার বার চাপা পড়ে যায় ও-আলোচনা। তবু ঘুরে ফিরে বার বার কথাটা ওঠে, স্বদেশী বাবুৱা বৌয়ের গয়না নিয়েছে, খুনেটাকে খুনও করবে। ডেভিসের চেয়ে কার্লটন চালাক বেশি, একটু পিছনে, আড়ালেই থাকে নিজে, যা কিছু করা দরকার করায় নলিনীকে দিয়ে। নলিনীকেই লোকে ভয় করে, ঘৃণা করে বেশি। সাদা হাতের চেয়ে সাদা হাতের কালে চাবুকটাকে। সার্চ চলে চারিদিকে, সকলের আগে কালীনাথের অগ্রণী ক্লাব, সাধনা সঙ্ঘ, ক্লাব ও সজেঘর সভ্য ও পুরানো দিনের ছাপ মারা কয়েকজন বিপ্লবপন্থীর বাড়ীতে। সাধনা সজন্য একটি ছোটখাট লাইব্রেরি, জেল-ফেরত প্ৰৌঢ়বয়সী। আগের যুগের স্বদেশী ডাকাত বিপিন দত্তের বাড়ীতে একটি আলমারি ও একটি বুক শেলফ নিয়ে। তাতে সাজানো থাকে শুধু দৰ্শন ও যোগসাধনের বই। সঙ্গে গীতা পাঠ ও ব্যাখ্যা, ভূমার বিচার-বিশ্লেষণ, যোগসাধনার লাভালাভ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়। বক্তা অধিকাংশ দিন বিপিন, মাঝে মাঝে তার সহযোগী দীনেশ দাশ । নারায়ণ মাঝে মাঝে এখানে আসে। বছর। খানেক আগে ছাড়া পেয়ে সে বাড়ীতে অন্তরীণ হয়ে আছে। রসিকের সাইকেল সারাই-এর কারখানা আর বাড়ী তল্লাস করা হল তন্ন তন্ন করে, কানাইকে থানায় নিয়ে যাওয়া হল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য, মুখ চোখ ফুলিয়ে কানাই ফিরে এল। রাত্রে জর এল। হু হু করে। থিয়েটার দেখতে দেখতে উঠে গিয়ে সে বাড়ী ফেরে নি, রাত্রে শুয়েছিল সমরের বাড়িতে। সার্চ করা হল সমরের বাড়ী।। তার বাবা দুৰ্গাপদ আদালতের পেশকার। যাকে তাকে বাড়ীতে আনার জন্য ছেলেকে সে একটা চাপড় মেরে বসল। পুলিস বাড়ী ছেড়ে যাওয়ার পর। সমর এক কাপড়ে বেরিয়ে গেল বাড়ী ছেড়ে, দশ বারোদিন পরে খোজ পেয়ে দুর্গাপদকেই কলকাতা গিয়ে তাকে বাড়ীতে ফিরিয়ে আনতে হল VV