পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২২
তরুণের স্বপ্ন

না। আর্য্য, দ্রাবিড় ও মঙ্গোল এই তিনটী জাতির রক্ত-সংমিশ্রণের ফলে বর্ত্তমান বাঙ্গালী জাতির উৎপত্তি। প্রত্যেক জাতির মধ্যে কতকগুলি গুণ বিশেষভাবে বিকাশ লাভ করে, সুতরাং রক্তের সংমিশ্রণ হইলে গুণের সংমিশ্রণও হইয়া থাকে। রক্ত-সংমিশ্রণের ফলেই বাঙ্গালীর প্রতিভা এমন সর্ব্বতোমুখী এবং বাঙ্গালীর জীবন এত বৈচিত্র্যপূর্ণ, আর্য্যের ধর্ম্মপ্রাণতা ও আদর্শবাদ, দ্রাবিড়ের কলাবিদ্যা ও ভক্তিমত্তা এবং মাঙ্গোলের বুদ্ধিকৌশল, অনুচিকীর্ষা ও বাস্তববাদ বাঙ্গলার সাগর-সঙ্গমে আসিয়া মিশিয়াছে। বাঙ্গালী যে একসঙ্গে তীক্ষুবুদ্ধিশালী ও ভাবুক, মায়াবাদ-বিদ্বেষী ও আদর্শবাদী, অনুকরণপ্রিয় ও সৃষ্টিক্ষম তাহা এই রক্ত-সংমিশ্রণের ফল। যে জাতির রক্ত কাহারও ধমনীতে প্রবাহিত হয় সে জাতির গুণ ও শিক্ষা (culture) জন্মের সময়ে সংস্কাররূপে তাহার চিত্তের মধ্যে স্থান পায়। বাঙ্গালী যেরূপ এক জাতিতে পরিণত হইয়াছে বাঙ্গলার শিক্ষা (culture)—ও তদ্রূপ বৈশিষ্ট্য লাভ করিয়াছে।

বাঙ্গলার ইতিহাস ও সাহিত্যের সহিত যাঁহার পরিচয় আছে, তিনি বোধ হয় স্বীকার করিবেন যে, বাঙ্গলার সভ্যতা আর্য্য-সভ্যতা হইলেও তাহা একটা বিশিষ্ট রূপ ধারণ করিয়াছে। স্বামী দয়ানন্দ উত্তরভারত জয় করিয়া আর্য্য-সমাজ আন্দোলন চালাইতে পারিয়াছিলেন কিন্তু তিনি বাঙ্গলা দেশে আমল পাইলেন না কেন? আর কালীর ভক্ত রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবকে সহস্র সহস্র শিক্ষিত বাঙ্গালী কেন এত ভক্তি করে বা অনুসরণ করে? বাঙ্গলায় দায়ভাগের প্রচলন কেন? বৌদ্ধধর্ম্ম সর্ব্বত্র বিতাড়িত হইলে অবশেষে বাঙ্গলা দেশে কেন শেষ আশ্রয় পাইল? বাঙ্গলা দেশে কেন নব্য-ন্যায়ের উৎপত্তি হইয়াছিল? বাঙ্গলা শঙ্করের মায়াবাদ গ্রহণ করে নাই কেন? বৌদ্ধধর্ম্ম বাঙ্গলা দেশ হইতে বিতাড়িত হইলে