পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৬
তিতাস একটি নদীর নাম

দিকে চাহিল। বাহারুল্লার বয়স তারই কাছাকাছি। তার ভরপুর সংসার। জমিগুলি সব নিজের। তিন ছেলেকে লইয়া চারজোড়া বলদ দিয়া চারখানা হাল চালায়। যত ধান ঘরে ওঠে, গিন্নি বৌদের নিয়া ভানিয়া ডোল ভরতি করে। এবার অনেক ধান উঠিয়াছে। কাটার বাকিও রহিয়াছে অনেক। ভোর হইলেই ছেলেদের ডাকিয়া মাঠে পাঠাইয়া দিবে, বৌদের ডাকিয়া তুলিবে আর চারজনে মিলিয়া ধান সিদ্ধ করিতে বসিবে। রাঁধে দুমুখো উনানে, কিন্তু ধানসিদ্ধ করে চারমুখো ছ’মুখো উনানে। একসঙ্গে চার-ছ হাঁড়ি সিদ্ধ হইয়া যায়। মোরগডাকার আগে সিদ্ধ শুরু করিয়া রোদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সে-ধান উঠানময় ছড়াইয়া দিবে। সারাদিন রোদ লাগিবে ধানে।

 লণ্ঠনের আলোতে সাদা মাটির উঠানটা চক্‌চক্ করিয়া উঠিল। হুকাটা ফিরাইয়া দিতে দিতে রামপ্রসাদ বলিল, ‘ধান ত এইবার খুব ফলছে।’

 ‘হ মাত্‌বর।’

 ‘জারি গাইবা না?’

 ‘না, এইবার ক্ষেমা দিলাম। ধান যেরকম গম্‌গমাইয়া পাক্‌তে লাগছে, জারির উস্তাদের খোঁজে ঘোরার সময় কই?’

 একমুখ ধোঁয়া ছাড়িয়া রামপ্রসাদ উঠানের দিকে একবার চাহিল। এ উঠানে কত জারিগান হইয়াছে। মুল্লুকের সেরা ওস্তাদ আনা হইত। একমাস ধরিয়া সে-ওস্তাদ পাড়ার ছেলেদের শিখাইত। তারপর নিমন্ত্রণ করিয়া পাল্টা দল আনা হইত। দুই দলে হইত প্রতিযোগিতা। ছেলে ও যুবার