পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 মশা, কঙ্কাবতীকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন,— “কেমন কঙ্কাবতী। তুমি আকাশে উঠিতে পরিবে তো? তোমার ভয় তো করিবে না?”

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “ভয়? আমার আবার ভয় কিসের? যদি আকাশে একবার উঠিতে পারি, তাহা হইলে দেখি, কি করিয়া চাঁদ আপনার মূল-শিকড় রক্ষা করেন। আর দেখি, আকাশের সেই বধির সিপাহীর কত ঢাল-খাড়া আছে; পতিপরায়ণা সতীর পরাক্রম আজ আকাশের লোককে দেখাইব।”


সপ্তম পরিচ্ছেদ

নক্ষত্রদের বৌ

খোক্কোশের বাচ্ছা ধরিয়া আকাশে উঠিবার কথা নাকেশ্বরী ও নাকেশ্বরীর মাসী বসিয়া বসিয়া শুনিল। তাহারা দুইজনে পরামর্শ করিতে লাগিল যে,— “যদি এই কাজটি নিবারণ করিতে পাৱা যায়, তাহা হইলে খর্ব্বুর আর আমাদের দোষ দিতে পারবে না, অথচ খাদ্যটিও আমাদের হাতছাড়া হইবে না।”

 মাসী বলিল,— “বৃদ্ধ হইয়াছি। এখন পৃথিবীর অর্দ্ধেক দ্রব্যে অরুচি। এইরূপ কোমল রসাল মাংস খাইতে এখন সাধ হয়। যদি ভাগ্যক্রমে একটি মিলিল, তাও বুঝি যায়!"

 নাকেশ্বরী বলিল,— “মাসি, তুমি এক কর্ম্ম কর! তোমার ঝুড়িতে বসিয়া তুমি গিয়া আকাশে উঠ। সমস্ত আকাশ তুমি একেবারে চুণখাম করিয়া দাও। ভাল করিয়া দেখিয়া-শুনিয়া চূণখাম করিবে, কোথাও যেন একটু ফাঁক না রহিয়া যায়! তুমি তোমার চশমা নাকে দিয়া যাও, তাহা হইলে ভাল করিয়া দেখিতে পাইবে। চুণখাম করিয়া দিলে ঠুড়ি আর আকাশের ভিতর যাইতে পথ পাইবে না, চাঁদও দেখিতে পাইবে না, চাঁদের মূল-শিকড়ও কাটিয়া আনিতে পরিবে না।”

 দুইজনে এইরূপ পরামর্শ করিয়া মাসী গিয়া ঝুড়িতে বসিল। বুড়ি হু-হু শব্দে আকাশে উঠিল। সমস্ত আকাশে নাকেশ্বরীর মাসী চুণখাম করিয়া দিল।

 অট্টালিকা হইতে বাহির হইবার সময়ে মশা দেখিলেন যে, সেখানে একটি ঢাক পড়িয়া রহিয়াছে। মশা সেই ঢাকটি সঙ্গে লইলেন। বাহিরে আসিয়া কঙ্কাবতী ও মশা, হন্তীর পৃষ্ঠে আরোহণ করিলেন। যে বনে খোক্কোশের বাচ্ছা হইয়াছে, সেই বনে সকলে চলিলেন। সন্ধ্যার পর খোক্কোশের গর্ত্তের নিকট উপস্থিত হইলেন।

 একবার আকাশপানে চাহিয়া মশা বলিলেন,— “কি হইল? আজি দ্বিতীয়ার রাত্রি, চাঁদ এখনও উঠিলেন না কেন? মেঘ করে নাই, তবে নক্ষত্র সব কোথায় গেল? আকাশ এরূপ শুভ্রবর্ণ ধারণ করিল কেন?”

 ধাড়ী-খোক্কোশ আপনার বাচ্ছা চৌকি দিয়া গর্ত্তে বসিয়া আছে! একে রাত্রি, তাতে নিবিড় অন্ধকার বন। দূর হইতে ধাড়ী-খোক্কোশ কঙ্কাবতীর গন্ধ পাইল।

কঙ্কাবতী
১১১