নয়নঁচাদের ব্যবসা
প্রথম পর্ব্ব
আঠারো
নয়নচাঁদের বাড়ী ফরাশ-ডাঙ্গা। নয়নচাঁদ গুলি খাইয়া থাকেন।
একদিন সন্ধ্যাবেলা নয়ন, লম্বোদর, গগন প্রভৃতি বন্ধুগণ আড্ডায় বসিয়া নিত্য-ক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিলেন। ক্রিয়াটির গুণ এই যে, মাঝে মাঝে মজার মজার কথা চাই। তাহা না হইলে প্রাণে ততটা আয়েস হয় না।
তাই, লম্বোদর জিজ্ঞাসা করিলেন,— “নয়ান! আজকাল তোমার কিছু সুখ-সাওয়াল দেখিতেছি। চিনির জলে আর সে তোমার ষোলা নাই। এখন সন্দেশটুকু, রসগোল্লাটুকু এ না হইলে আর তোমার চাট হয় না। মুখে একটু তোমার কান্তি বাহির হইয়াছে, শরীরে লাবণ্য দেখা দিয়াছে, গায় তোমার তোলা মারিয়াছে। যাকের টাকা পাইয়াছ না কি?”
আর সকলেও বলিয়া উঠিলেন,— “সত্য হে! ব্যাপারখানা কি বল দেখি নয়ান! গুলিখোর বলিয়া তোমাকে আর চেনা যায় না। স্বয়ং মা লক্ষ্মীকে বাটিয়া যেন তুমি মুখে মাখিয়াছ। নয়ান! কিসে তোমার কপাল ফিরিল, তা বল।”
নয়ন অনেকক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন। বিশেষ চিন্তা করিয়া, অবশেষে বাজ খাই স্বরে বলিলেন,— “আড্ডাধারী মহাশয়! ইঁহাদগকে জিজ্ঞাসা করুন, ইঁহারা হিন্দু কি মুসলমান?”
গগন বলিলেন,— “ধান ভানিতে শিবের গীত। কোথাকার কথা কোথা! মুসলমান কেন আমরা হইতে যাইলাম? কবে তুমি কারে কাছা খুলিয়া নামাজ করিতে দেখিয়াছ যে, ফট্ করিয়া এমন কথা জিজ্ঞাসা করিলে? নয়ান! আজ তুমি আর অধিক ছিটে টানিও না, তোমার হেড্ খাবার হইয়া গিয়াছে।”
নয়ন উত্তর করিলেন,— “চট্ কোন ছাই। কথাটা যখন বলিলাম, তখন অবশ্য তাহার মানে আছে। তোমরা জিজ্ঞাসা করিলে যে, আমার সংসার সচ্ছল কিসে হইল? যদি সব কথা খুলিয়া বলি, হয়তো তোমরা হাসিয়া উঠিবে। তার চেয়ে না বলা ভাল। আজকাল আমার হইল ধর্ম্মগতপ্রাণ। বন্ধু হইলে কি হয়? তোমাদের মতি-গতি অন্যরূপ। কিসে আমার দুপয়সা হইল, তা আমি তোমাদিগকে বলিতে চাই না! আর তোমরাও জিজ্ঞাসা করিও না।”
নয়নের কথায় সকলের ঘোরতর কুতূহল জন্মিল। কিসে নয়নের পয়সা হইল, একথাটি শুনিবার জন্য সকলের প্রাণ বড়ই উৎসুক হইল। বলিবার জন্য নয়নকে সকলে বার বার অনুরোধ করিলেন। নয়ন কিছুতেই বলেন না। অবশেষে স্বয়ং আড়াধারী মহাশয় আসিয়া অনুরোধ করিলে, নয়ন বলিতে লাগিলেন।
নয়ন বলিলেন,— “আমি বলি। কিন্তু যাহা বলিব, তাহা শুনিয়া যদি হাসো, কি ঠাট্টা বিদ্রুপ