পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভক্তি জনিয়াছিল। রসময়বাবু তাঁহাকে কি উত্তর দিবেন, তাহা ভাবিতেছেন, এমন সময় বৈঠকখানার বাহিরে সেই জনতার ভিতর আবার কি গোল হইল। আমার মুখপানে চাহিয়া রসময়বাবু বলিলেন, — “আবার কি উৎপাত ঘটে দেখা। সকলেই কন্যার বিবাহ দিয়া থাকে, কিন্তু এমন কেলেঙ্কারি। আর কখনও দেখি নাই। লোকের কাছে যে মুখ দেখাইব, সে যে আর আমার রহিল না।” চতুর্থ পরিচ্ছেদ গলা-ভাঙ্গা দিগম্বরী বাস্তবিক এই সময় আর একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটিল। ভিড় ঠেলিয়া একজন বৈঠকখানার ভিতর প্ৰবেশ করিলেন। তাঁহার লম্বা-চওড়া চেহারা দেখিয়া, প্রথম তাঁহাকে পুরুষ-মানুষ বলিয়া আমার ভ্রম হইয়াছিল; কিন্তু তাঁহার পরিধেয় বস্ত্ৰ দেখিয়া সে ভ্ৰম আমার দূর হইল। চওড়া কস্তাপেড়ে শাড়ী তিনি পরিয়াছিলেন। মুখখানি তাঁহার বড় একটি হাঁড়ীর মত ছিল। সেই হাঁড়ীর মধ্যস্থল উচ্চ নাসিকা দ্বারা, দুই পার্শ্ব দুই চালুরুঞ্জস্থি দ্বারা, নিম্নদেশ মুখ-গহ্বর দ্বারা, আর তাহার উপর কতকগুলি বড় বড় গােঁফের কোষ্ঠীর সুশোভিত ছিল। যদি কোন মানুষের ঠিক বাঁশীর মত নাক থাকে, তাহা হইলে ভুক্ঠিপ্লছিল। মাথার চুলগুলি অধিকাংশ পাকিয়া গিয়াছিল, তবে পাকার ভিতর কঁচা চুলগুৰ্ভুিদীর্ক ছিল। মাথার সম্মুখভাগে টাক পড়িয়াছিল। কতক সেই টাকের উপর হইতে, কতকুণ্ঠকীৰ্চা-পাকা চুলের ভিতর হইতে সিন্দুরের ছটা বাহির হইতেছিল। শীতলাদেবী কি ললাটদেশের এতখানি অংশ সিন্দুরে রঞ্জিত করেন কি না, তা সন্দেহ। সেই সিন্দুরের ছটা দেখিয়া বোধ হইল, যেন তাহার দেহটি সমস্ত শরীরটি পতিভক্তিতে পূর্ণ হইয়া গিয়াছে; শরীরে পতিভক্তি আর ধরে না, তাই তাহার কতকটা মাথা ফুড়িয়া বাহির হইতেছে। স্ত্রীলোকটি শ্যামবর্ণ, তাহার দেহটি যেমনি দীৰ্যে, তেমনি প্রন্থে: পাঠানদিগের দেশেও তাঁহার প্রতি একবার ফিরিয়া চাহিতে হয়; তাঁহার নাকে নথ ও হাতে শাখা ছিল। বয়ঃক্রম পঞ্চাশের অধিক হইবে। কিন্তু এখনও তাঁহার দেহে অপরিমিত বল ছিল, তাহা তাঁহার আকৃতি ও ভঙ্গীতে প্ৰকাশ পাইতেছিল। স্ত্রীলোকটি যে আমাদের দেশের লোক, বাঙ্গালী, পরিধেয় বস্ত্ৰ দেখিয়া প্রথমেই তাহা আমি বুঝিতে পারিয়াছিলাম। আরও ভালরূপে নিরীক্ষণ করিয়া আমি বুঝিতে পারিলাম যে, তিনি ভদ্রকন্যা ও ভদ্ররমণী, আকৃতি-প্রকৃতি যেরূপ হউক না কেন। সিন্দুর প্রসঙ্গে আমি তাঁহার পতিভক্তির উল্লেখ করিয়াছি। সেই সম্বন্ধে তাহার দন্তপূর্ণ মুখখানি আরও পরিচয় প্রদান করিতেছিল। সেই মুখখানি যেন পৃথিবীর সমস্ত নারীকুলকে বলিতেছিল,— “ওরে অভাগীরা! পতিপরায়ণা সতী কাহারে বলে, যদি তোদের দেখিতে সাধ থাকে। তবে আয়। এই আমাকে দেখিয়া যা; আমি তাহার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত, সাক্ষাৎ পতিভক্তি মূৰ্ত্তিমতী হইয়া আমি এই পৃথিবীতে অধিষ্ঠান করিয়াছি।” স্বরে তিনি বলিলেন,- “কৈ! কোথায় সে ফোকলা কোথায়! সে মুখ-পোড়া নচ্ছার কোথায়?” ফোকুলা দিগম্বর sNAls viði (< BS! ro www.amarboi.com ro Sዓd