পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিনি কোথায় গমন করিতেছিলেন। তাঁহার বয়স পঞ্চাশের অধিক হইবে। তাঁহার মুখ দেখিলে তাহার প্রতি ভক্তি হয়; কিন্তু মুখখানি অতিশয় বিষগ্ন। তিনি যেন ঘোর দুঃখে সৰ্ব্বদাই নিমগ্ন আছেন। হাতে পুস্তক দেখিয়া বুঝিলাম যে, তিনি লেখাপড়া জানেন। সেই বিষণুবদনে লক্ষ্মীশ্ৰী দেখিয়া আমি ভাবিলাম যে, যদি কপালে থাকে, তাহা হইলে এ লোকের আমি জামাতা হইব। কিন্তু আর একজনের সহিত তাহার কন্যার বিবাহ-সম্বন্ধ হইয়া আছে। সে কিরূপ, তাহা আমাকে দেখিতে হইবে। কিন্তু তাহার পিতা অর্থাৎ নিয়োগী মহাশয়ের ভাব দেখিয়া আমার ভয় হইতে লাগিল। নিয়োগী মহাশয়ের মুখখানি অনেকটা বিভীষণের মত। মুখের দুই পাশে দুই গাল যেন দম্ভ করিয়া আগে বাড়িতেছে। তাহার মাঝখানে আধা-পাকা আধ-কঁচা ছাঁটা গোপগুলি সব খোচা খোচা হইয়া আছে। তাঁহাকে দেখিয়া আমি মনে করিলাম যে, লোকে যে গোপ-ছাঁটা বদমায়েশের কথা বলে, ইনি একজন তাই। সে যাহা হউক, আমি অনেক কৌশল করিয়া তাঁহার পুত্রের সহিত আলাপ করিলাম। তাহার পুত্রের মুখমণ্ডলে সুলক্ষণ আমি কিছু দেখিলাম না। পিতার বদমায়েশি ভােব যেন পুত্রের মুখেও প্রতিফলিত হইয়াছে। কিন্তু রোগে এখন তাহার শরীর জীর্ণ হইয়াছে, মুখ তাহার শুষ্ক ও মলিন হইয়াছে। এরূপ অবস্থায় তাহার জন্য আমার মনে দুঃখ হওয়া উচিত; কিন্তু সত্যকথা বলিতে কি, তাহা আমার হয় নাই। তাহার প্রতি বরং আমার হিংসা হইল। আমি এমন সুন্দর পুরুষ, যাহাকে মনে মনে পত্নীরূপে বরণ করিয়াছি, সে এই মার্কটের হাতে পড়িলেও পড়িতে পারে, সে চিন্তা আমার অসহ্য হইয়া উঠিল। সত্য বটে, সেই সুন্দরীকে আমি এখনও চক্ষেও দেখি নাই। কিন্তু তাহা হইলে কি হয় তাহার পায়ের চারি গাছি মলের রুণুরুণু শব্দ সৰ্ব্বদাই যে আমার কানে লাগিয়া আছে! চাবি খোলার শব্দ হয়, আর আমার প্ৰাণটা ধড়াশ করিয়া উঠে; আমি ভাবি, এ আমার হৃদয়-আসীনা আমার প্রাণদেবীর পদনিঃসৃত সেই কিঙ্কিণী শব্দ। তাহাকে নাই সত্য; কিন্তু ভট্টাচাৰ্য মহাশয়ের বিবরণ অবলম্বন করিয়া আমার মানসক্ষেত্রে তাহারািচত্রে আঁকিয়া লইয়াছিলাম। নিয়োগী-পুত্রের পীড়া সঙ্কট, সৰ্ব্বধৰ্মই সে ঘরের ভিতর শুইয়া থাকে; উঠিয়া বেড়াইবার শক্তি বড় নাই; তথাপি সে মাঝে বাটীর ভিতর গিয়া পাল মহাশয়ের পরিবারবর্গের সহিত সাক্ষাৎ করে। পাল মহাশয়ের সহিত নিয়োগী মহাশয়ের বহুদিন ধরিয়া আলাপ-পরিচয় আছে। শুনিলাম যে, দেশে ভূমিসম্পত্তি লইয়া একবার পাল মহাশয়ের কি মকৰ্দমা হইয়াছিল। তাহাতে জাল করিয়া ও মিথ্যা সাক্ষীর যোগাড় করিয়া নিয়োগী মহাশয় তাহার অনেক উপকার করিয়াছিলেন। সেই অবধি দুই পরিবারে বিলক্ষণ সদ্ভাব জিনিয়াছিল। এইসব কথা শুনিয়া মাঝে মাঝে আমি নিরাশ হইয়া ভাবিতাম যে, কে হে তুমি মদন ঘোষ। যে পাল মহাশয়ের কন্যার প্রতি কটাক্ষ করা? তবে আশা এই যে, নিয়োগী মহাশয়ের পুত্ৰ বোধ হয়, এ যাত্রা রক্ষা পাইবে না। সে যাহা হউক, আমি সেই পীড়িত যুবকের নিকট মাঝে মাঝে বসিয়া তাহার সহিত গল্প করিতাম। গল্পচ্ছলে পাল মহাশয়ের কথা, তাহার পরিবারের কথা, তাহার কন্যার কথা জিজ্ঞাসা করিতাম। নিয়োগী-পুত্র ভাল করিয়া আমাকে পরিচয় প্ৰদান করিত না। কথার ছলে আমার সন্দেহ হইল যে, পাল মহাশয়ের সংসারে কোনরূপ একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে। সে কথা সাধারণের নিকট প্রকাশ করিবার নহে। ইতিপূৰ্ব্বে বন্ধু-বান্ধব ও কুটুম্বদিগের দ্বারা আমি পাল মহাশয়ের বংশ-পরিচয় গ্ৰহণ করিয়াছিলাম । সেই সক মেয় একজন আমাকে বলিয়াছিল। যে, পাল মহাশয়ের এক পুত্ৰ আছে। সে পুত্ৰ এখন কোথায়? সে কথার কোন সন্ধান আমি পাইলাম না। নিয়োগী-পুত্রকে জিজ্ঞাসা করিলে, সে আমার উপর রাগিয়া উঠে। N মুক্তা-মালা sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro 8s