পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লইয়া স্বতন্ত্র একটি শয্যাতে শয়ন করিয়া, সে কাঁদিতে লাগিল। যখন ঘোর রাত্রি হইল, তখন কে একজন বাহিরে আসিয়া ঘরের আগড় ঠেলিতে লাগিল,— ‘মাসি! আগাড় খুলিয়া দাও।” হারাণের স্ত্রী মনে করিল যে, আমার বোনপো তো কেহ নাই; এ ঘোর রাত্রিতে বিপদের সময় কে আসিয়া ডাকাডাকি করে। সেজন্য প্রথম উত্তর দিল না। কিন্তু বাহিরের সে ব্যক্তি পুনরায় সবলে আগড় ঠেলিয়া বলিল,— “শীঘ দ্বার খুলিয়া দাও, মাসি! মেসো মহাশয়ের পীড়ার কথা শুনিয়া আমি আসিয়াছি। শীঘ্ৰ আগড় খুলিয়া দাও।”—হারাধণের স্ত্রী ভাবিল যে,— দূরসম্পৰ্কীয় তাহার কোন ভগিনী থাকিতে পারে। কৰ্ত্ত হয়তো তাহার পুত্রের নিকট সংবাদ প্রেরণ করিয়াছিলেন। সেজন্য সে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। এইরূপ মনে করিয়া চক্ষের জল ফেলিতে ফেলিতে সে শয্যা হইতে উঠিয়া আগড় খুলিয়া দিল। সেই মুহুৰ্ত্তে ভয়ঙ্কর এক মূৰ্ত্তি ঘরের ভিতর প্রবেশ করিল। ঘরে মিটু-মিটু করিয়া একটি প্ৰদীপ জ্বলিতেছিল। সেই আলোকে হারাণের পত্নী সেই ভয়ঙ্কর মূৰ্ত্তি দেখিতে পাইল। তাহার বর্ণ সবুজ, তাহার মুখ ও পেট যেন এক একটি জালা। তাহারও কপালে ফোঁটা ছিল! সেই জন্য আমার বোধ হয় যে তুমি কাল রাত্রিতে যাহাকে দেখিয়াছিলে, সেও রাক্ষস—ভূত নহে। কারণ, ভূতে ফোঁটা কাটে না, আর তাহাদের রং সবুজ হয় না।” এতদূর বলিয়া ভট্টাচাৰ্য মহাশয় চুপ করিলেন। অতি আগ্রহের সহিত আমি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম,- “হারাণ সুরের ঘরে তাহার পর রাক্ষস কি করিল?” ভট্টাচাৰ্য মহাশয় বলিলেন,- “সেই ভয়ঙ্কর মূৰ্ত্তি দেখিয়া, হারাণ সুরের পত্নীর প্রাণ উড়িয়া গেল!! তাড়াতাড়ি সে ছেলে দুইটির নিকটে গিয়া র মাঝখানে শয়ন করিল। ভাগ্যে শীতকাল, সেজন্য বিছানায় বড় একখানি কাঁথা সেই কথা দিয়া ছেলে দুইটিকে সে ঢাকা দিলা নিজেও কঁথা মুড়ি দিয়া কঁদিতে ও কঁপ্তি চলাগিল।” “রাক্ষস কিন্তু তাহাদিগকে কিছু । ঘরের অপর পার্শ্বে যে স্থানে একটি মাদুরের উপর হারাণ সুরের মৃতদেহ পড়িয়ঞ্জল, রাক্ষস বরাবর সেই স্থানে গিয়া মাদুরের উপর উপবেশন করিল। তাহার পর, মড়াৎ করিয়া হারাণের একটি হাত ভাঙ্গিয়া কড়-মড় শব্দে চিবাইতে লাগিল। সে হাতটি সমাপ্ত হইলে পুনরায় আর একটি হাত ভাঙ্গিয়া সেইরূপ ভক্ষণ করিল। হাত দুইটি শেষ হইলে একটি পা ভাঙ্গিয়া খাইতে লাগিল। ঘরের ভিতর ক্রমাগত চপ্‌চপৃ চপ্‌-চপৃ, কড়-মড় কডু-মন্ডু শব্দ হইতে লাগিল। সেই শব্দে শিশু দুইটি নিদ্ৰাভঙ্গ হইল। গা টিপিয়া মাতা তাহাদিগকে কাঁদিতে নিষেধ করিল। কাঁদিবে কি, চীৎকার করিবে কি, তোমার মত তাহারাও ভয়ে হতবুদ্ধি হইয়া গিয়াছিল। ভয়ে জড়সড় হইয়া কাঁথার ফাঁক দিয়া তিন জনে এই ভীষণ ও বীভৎস ব্যাপার দর্শন করিতে লাগিল। হারাণের স্ত্রী ভাবিতে লাগিল যে— স্বামীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাক্ষস যেরূপ শীঘ শীর্ঘ ভক্ষণ করিতেছে, তাহাতে আর অল্পক্ষণের মধ্যেই সে সমুদায় শরীরটা খাইয়া শেষ করিবে। ইহার পেটটি যেরূপ জালার মত দেখিতেছি, তাহাতে একটি দেহ খাইয়া ইহার পেট ভরিবে না। তখন আমাদের তিন জনকেই হয়তো খাইয়া ফেলিবে। নিজের যাহা হাউব, শিশু দুইটিকে যে সে ভক্ষণ করিবে, প্ৰাণ থাকিতে তাহা তো আমি দেখিতে পারিব না। এইরূপ চিন্তা করিয়া হারাণের স্ত্রী গা টিপিয়া শিশু দুইটিকে উঠিয়া বসিতে ইঙ্গিত করিল। তাহারা উঠিয়া বসিল। তখন সে ছেলে দুইটির হাত ধরিয়া ঘর হইতে পলায়ন করিতে চেষ্টা করিল। আগড়ের নিকট গিয়া উপস্থিত হইয়াছে, এমন সময় রাক্ষসের দৃষ্টি তাঁহাদের উপর পড়ল। চক্ষুদ্বয় রক্তবর্ণ করিয়া, দন্ত কড়মড় করিয়া অতি কৰ্কশ 888 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboicom 25°