পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৫৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাত্ৰিতে তাহার সখটি কিছু প্ৰবল হইত। অলক ঠাকরুণ র্তাহার ভগিনী। জগমোহন রায়ের এক পুত্র ও দুই কন্যা ছিল। পুত্ৰ সীতার মামা, যিনি এখন পশ্চিমে কাজ করেন। বড় কন্যার নাম ছিল রামমণি, যাহার ভূতকে সীতা মাঠের মাঝখানে গাছতলায় দেখিয়াছিল। ছোট মেয়ের নাম ছিল তারামণি, তিনি সীতার মা। রায়চৌধুরী বড় মানুষ লোক, কোন পুরুষ কন্যা শ্বশুরবাড়ী পাঠাইতেন না। কিন্তু রামমণির এক তেজস্বী পুরুষের সহিত বিবাহ হইয়াছিল। তিনি বলিলেন যে,- “ঘর-জামাই হইয়া আমি কিছুতেই থাকিব না।” আপনার স্ত্রীকে তিনি নিজের বাড়ী লইয়া যাইতে চাহিলেন। কিন্তু কৰ্ত্তা কিছুতেই সম্মত হইলেন না। শ্বশুর-জামাতায় ঘোর বাদবিসম্বাদ বাধিয়া গেল। অবশেষে কৰ্ত্তা একদিন রামমণিকে ডাকিয়া জামাতার সমক্ষে জিজ্ঞাসা করিলেন,- “তুমি ইহাকে চাও—না আমাকে চাও।” রামমণি উত্তর করিলেন,- “বাবা! উঠিলেন। তিনি বলিলেন,- “বাঁট! তবে এখনি আমার বাড়ী হইতে দূর হও। আমি প্ৰতিজ্ঞা করিতেছি যে, আজ হইতে আমি তোমার মুখ দেখিব না।” রামমণি শ্বশুরালয়ে গমন করিলেন। নয়-দশ বৎসর স্বামীর ঘর করিলেন। তাঁহার একটি কন্যা হইল। সে কন্যাটির ভূত সীতাকে মাঠে লইয়া গিয়াছিল। নয়-দশ বৎসর পরে রামমণির স্বামীর মৃত্যু হইল। পরিবার প্ৰতিপালনের নিমিত্ত তিনি একটি পয়সাও রাখিয়া যান নাই। রামমণি ঘোর বিপদে পড়িলেন। পিতাকে কয়েকখানি পত্র লিখিলেন। পিতা কোন উত্তর দিলেন না। অবশেষে ভাবিলেন,- “পূজার সময় লোকের মন নরম হয়। এই পূজার সময়ত্ত্বাবার পায়ে গিয়া পড়ি, তাহা হইলে তিনি বােধহয় ক্ষমা করবেন।” পূজার সময় কন্যাকৃেষ্ট্ৰেয়ী রামমণি পিতার বাটীতে আসিলেন। গাছতলায় মরিয়া পড়িয়া আছেন। কৰ্ত্ত আরও কয়েক মাস জীবিত রহিলেন। কিন্তু হইতেই আর তিনি কথা কহিতে পারেন নাই, কি উঠিয়া বসিতে পারেন নাই। সেই তাঁহার লক্ষ্মী ছাড়িয়া গেল। জমিদারী, টাকা-কড়ি কিরূপে কোথায় যে উড়িয়া গেল, তাহ কেহ বলিতে পারে না। ঘর-জামাই রাখার অহঙ্কারও সেই সঙ্গে দূর হইল। সেজন্য সীতার মাকে শ্বশুরবাড়ী পাঠাইতে আর কোন আপত্তি রহিল না। কৰ্ত্তা, রামমণি ও তাঁহার কন্যা—তিন জনেই এখন ভূত হইয়া আছেন। কতবার গয়াতে পিণ্ড দেওয়া হইয়াছিল। কিন্তু কোন ফল হয় নাই।” পরদিন প্ৰাতঃকালে আমি ভাবিলাম যে, ভিক্ষা করিয়া খাইতে হয়, সেও স্বীকার; তবু সীতাকে লইয়া সে বাড়ীতে আর আমি থাকিব না। সীতার ভাই, তোমার মামাকে আমি পত্র লিখিলাম। ভাগ্যক্রমে এই সময় তাহার কৰ্ম্ম হইয়াছিল। তিনি আসিয়া আমাকে ও সীতাকে তাহার নিজের বাড়ীতে লইয়া গেলেন। কিছুদিন পরে সীতার বিবাহ হইল। তাহার পর তুমি ও প্ৰভা হইলে । কিছুদিন পরে তোমার পিতার কাল হইল। অল্পদিন পরে দিদিমণিও তাঁহার সঙ্গে স্বর্গে গেলেন। দিদিমণিকে হারাইয়া কি করিয়া আমি যে প্ৰাণ ধরিয়া আছি, তাহাঁই আশ্চৰ্য । যাহা হউক, তোমাদের দুইজনকে পাইয়া আমি শোক অনেকটা নিবারণ করিতে পারিয়াছি। মা দুৰ্গা তোমাদিগকে আর যত ছেলে-পিলেকে বাচাইয়া রাখুন। Qbrミ দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.comন্মিলাক্যনাথ রচনা সংগ্ৰহ