পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৭২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোপনে একটি খন্তা আনিয়া ঐ অন্ধকার ঘরের ভিতর প্রবেশ করিলাম। দিয়া সলাইয়ের কাঠি জুলাইয়া দেখিলাম যে, ইহার সেই পুরাতন মেজে নাই, নূতন মেজে হইয়াছে। একবার ভাবিলাম যে, যে লোক মেজে খনন করিয়াছিল, লুক্কায়িত অর্থ হয় তো তাহার হস্তগত হইয়াছে। আবার ভাবিলাম যে, না-তাহা হইলে রাজাবাবু আমাকে সোনার ইট লইতে অনুরোধ করিতেন না। প্রাচীরের অনেকটা আমি খনন করিলাম। কিন্তু কিছুই পাইলাম না। কয় বৎসর এইরূপে কাটিয়া গেল।” বড়ালমহাশয় জিজ্ঞাসা করিলেন, — “রায়মহাশয়ের ঘরে ঢ়িল ফেলিয়াছিলে কেন? জান যে, তাহাই তাঁহার মৃত্যুর কারণ হইয়াছিল!” খাদা ভূত উত্তর করিল,— “তাহা আমি জানি না। প্রতি বৎসর বাড়ীর ভিতর বারেণ্ডায় দাঁড়াইয়া ঘরে উকি মারা আমার অভ্যাস হইয়াছিল। সে বৎসর সে দিকের জানােলা তিনি বন্ধ রাখিয়াছিলেন। সে দিক দিয়া তাহাকে দেখিতে না পাইয়া আমি সেই ঘরের পার্শ্বে বাগানে গিয়া দাঁড়াইলাম। সে দিকের জানােলা উন্মুক্ত ছিল। সেই দিক দিয়া তাহার ঘরে দুই তিনটি ঢ়িল নিক্ষেপ করিলাম। কেন চিল ফেলিলাম, তাহা আমি জানি না। তখন আমার ক্ষিপ্ত অবস্থা। উন্মাদ দ্বারা অনুষ্ঠিত সকল কাৰ্য্যের কারণ থাকে না। তোমরা বলিবে যে, যখন সে সময়ের সমস্ত ঘটনা তোমার স্মরণ রহিয়াছে, তখন তুমি উন্মাদ কি করিয়া? সত্য বটে! সে বিষয়ে চিন্তা করিয়া আমিও আশ্চৰ্য্যান্বিত হই। ক্ষিপ্ত দশায় আমার জ্ঞান থাকে; কিন্তু মনের উপরে, শরীরের উপরে, কাৰ্য্যের উপরে আমার কিছুমাত্ৰ প্ৰভুত্ব থাকে না। আমি মনে করি যে, কেন আমি বৃক্ষে আরোহণ করি, কেন আমি লম্বফঝম্বফ করি, রু দণ্ড দিতেছেন, কেন আমি তাহার কথা শুনিয়া তাহার বাটীতে গমন করি, কেন করি, কেন আমি আমার কণ্ঠ হইতে ভয়াবহ হুহুঙ্কার শব্দ নিঃসারিত হইতে দিই। মনে মনে এইরূপ বিচার করিয়াও আমি আপনাকে ঠিক রাখিতে পারি না। কে করে ।” বিনয় জিজ্ঞাসা করিলেন,- “গত পাঁচ-ছয় বৎসর কোথায় ছিলে?” খাদা ভূত উত্তর করিল,— “শেষ বৎসর এ স্থান হইতে গিয়া একদিন ক্ষুধায় বড়ই পীড়িত হইয়াছিলাম। “বুভুক্ষিতঃ কিং ন করোপিত পাপং, ক্ষীণা জনা নিষ্করুণা ভবান্তি।” ক্ষুধাৰ্ত্ত লোক না করিতে পারে এমন কাজ নাই। কোন এক গ্রামের নির্জন পথে নানা অলঙ্কারে বিভূষিত এক বণিকপুত্ৰকে দেখিয়া তাহার গহনা কড়িয়া লইতে চেষ্টা করিয়াছিলাম। গ্রামের লোকে আমাকে ধরিয়া ফেলিল। চৌৰ্য্য ও নরহত্য-চেষ্টার অপরাধে অভিযুক্ত হইয়া আমার পাঁচ বৎসর কারাবাসের দণ্ড হইল। যখন ভদ্র মাস আসিল, তখন কারাবাসের কর্তৃপক্ষগণ জানিতে পারিল যে, আমি ক্ষিপ্ত। তাহারা আমাকে পাগলা-গারদে প্রেরণ করিল। সে স্থানে লোকে একবার, দিন কয়েকের জন্য আমি ক্ষিপ্ত হই ও সে সময় কাহারও কোনরূপ অনিষ্ট করি না । যে কারণেই হউক, পাঁচ বৎসর পরে আমাকে মুক্ত করিয়া দিল। তাহারা আমার জটা কাটিয়া দিয়াছিল।” বড়ালমহাশয় জিজ্ঞাসা করিলেন,- “এখন কি তোমার ক্ষিপ্ত অবস্থা?” খাদা ভূত উত্তর করিল,—“না, এখন আমার সহজ অবস্থা। কিন্তু ক্ষিপ্ত-কাল আগতগ্ৰায়।” বড়ালমহাশয় জিজ্ঞাসা করিলেন,- “এখন তবে কি জন্য আসিয়াছ?” খাদা ভূত উত্তর করিল,- “কারাগারে ও পাগলা-গারদে বাসের সময় যখন ক্ষিপ্ত হইতাম, ANVI দুনিয়ার পাঠক এক হও! ৩ www.amarboi.com/f46লাক্যনাথ রচনাসংগ্ৰহ