পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৮৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শুইয়া তাহা ভাবিতে লাগিলাম। দুর্লভীর জিন্মায় পুষ্করিণীটি রাখিয়াছে। মনে করিলাম যে, কাল বৈকালবেলা ছিপ ফেলিয়া সেই পুষ্করিণী হইতে মাছ চুরি করিব। সুন্দরবনে আমার আবাদের নিকট একবার জনকয়েক সাহেব শিকার করিতে আসিয়াছিলেন। তাহারা একটি টুপি ফেলিয়া গিয়াছিলেন। টুপিটি কুড়াইয়া আমি বাড়ী আনিয়াছিলাম। পরদিন সন্ধ্যার কিছু পূৰ্ব্বে সেই টুপিট বগলে লইয়া ছিপ হাতে করিয়া আমি গদাই ঘোষের পুষ্করিণী পাড়ে উপস্থিত হইলাম; যে ধার দিয়া লোক গতায়াত করে, তাহার বিপরীত দিকে এককোণে বনে পূর্ণ ছিল। ঝোপের ভিতর গিয়া আমি সাহেবদের সেই কালো রঙের ধুচুনির মত লম্বা টুপিট মাথায় দিলাম। আজকালের বাবুদের মত গায়ে আমি জামা পরি না। কোমরে কেবল ধুতি ছিল। আমি ভাবিলাম যে, আমাকে কেহ চিনিতে পরিবে না। সকলে মনে করিবে যে, সাহেব মাছ ধরিতে আসিয়াছে। সাহেব দেখিলে কেহ কিছু বলিবে না। নিকটের জল—নাল-ফুল ও কলমি শাকের গাছে পূর্ণ ছিল। কেবল এক স্থানে একটু ফাঁক ছিল। ময়দার টােপ গাঁথিয়া আমি সেই পরিষ্কার স্থানে ছিপ ফেলিলাম। কিছুক্ষণ পর বোধ হইল যেন মাছে ঠোকরাইল। আমি টান মারিলাম। বঁড়িশি জলের ভিতর নাল গাছে লাগিয়া গেল। অনেক টানাটানি করিলাম, অনেক চেষ্টা করিলাম, কিছুতেই খুলিতে পারিলাম না। তখন বুঝিলাম যে, জলে নামিয়া না খুলিলে আর অন্য উপায় নাই। কিন্তু কাপড় ভিজিয়া যাইবে, জলে কি করিয়া নামি । চারিদিকে চাহিয়া দেখিলাম- কেহ কোথাও নাই। কাপড় খুলিয়া উলঙ্গ হইয়া জলে নামিলাম। একবুক জল হইল। অতিকষ্টে নাল গাছের ডাটা হইতে বড়শি খুলিয়া উপরে উঠিয়া কাপড় পরিতে যাই—সৰ্ব্ব স্থানে কাপড় রাখিয়া গিয়াছিলাম সে স্থানে কাপড় নাই। বনের ভিতর চারিদিকে কাপড় দেখিতে পাইলাম না। তখনও সম্পূর্ণ সন্ধ্যা হয় নাই। সে উলঙ্গ আমি বাটী ফিরিয়া যাইতে পারি না। কি করিব। চার করিয়া পুনরায় ছিপ মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম যে, এ সেই কেষ্টা ছোড়ার কৰ্ম্ম, সে আমার টাকের য়া আমাকে ক্ষেপায়। সে দূর হইতে আমাকে বলে— টাক-চাঁদ, টাক-বাহাদুর, টাকেশ্বর । কেষ্টা ছোড়ার অগম্য স্থান নাই। যখন জলে নামিয়া, পিছন ফিরিয়া এক মনে আমি বঁড়শি খুলিতেছিলাম, সেই সময় সে আমার কাপড় লইয়া গিয়াছে। কেবল তাহা নহে। সে দুর্লভীকে গিয়া সংবাদ দিয়াছিল। কারণ, অল্পক্ষিণ পরেই দুর্লভী ও হিরী বাগদিনী আসিয়া পুষ্করিণীর অপর পাড়ে দাড়াইল । কিছুক্ষণ একদৃষ্টি আমার দিকে চাহিয়া দুর্লভী বলিল,— “একটা সাহেব!” হিরী বাগদিনী বলিল,- “সাহেবটার গায়ের রং কালো মিশমিশে। যাহারা পাখী মারিতে আসে, সেই সাহেব।” দুর্লভী বলিল,- “সৰ্ব্বনাশ! নেঙটা গোরা! তবে আমি পলাই; যাকে বলে ব্ৰাণ্ডি, ভাই উহারা খায়।” দুর্লভী বলিল,- “চল, গদাই ঘোষকে গিয়া বলি।” আমি ভাবিলাম,- “ঘোর বিপদ হইল। সমস্ত গ্রামের লোককে সঙ্গে লইয়া গদাই ঘোষ হয় তো এখনি আসিয়া উপস্থিত হইবে। আমি সম্পূর্ণ উলঙ্গ, মাথায় কেবল এক সাহেবি টুপি । এ অবস্থায় সকলে হয় তো আমাকে এলোকেশীর নিকট ধরিয়া লইয়া যাইবে। সাহেবের পোষাক পরিয়া দুর্লভীর ঘরের নিকট আমি গিয়াছিলাম, তাহা শুনিলে এলোকেশী আর রক্ষা রাখিবেন না । broers দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comািলকানাথ রচনাসংখ্যাই