বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাব। বাড়ি শান্তিপর গোঁসাইপাড়া। লোকটা বললে—একটা বিড়ি খান দাদাবাব। বেশ লোকটা। ও রকম লোক আমার ভাল লাগে। সহজ সরল মানষ, এমন সব কথা বলে যা আমি সাধারণতঃ শনি নে। সন্দরপরে আসতে প্রমথ ঘোষ সাইকেল চেপে কোথায় যাচ্চে দেখলাম। আমি আর আমার সঙগী দল-জনে মোল্লাহাটির খেয়াঘাটে পার হই। সন্দির মেঘাচ্ছন্ন সকাল বেলা, নদীজলা শান্ত, ওখানে সবজি কিষাড় বন । খেয়া পার হয়ে কেউটে পাড়া, মড়িঘাটা ছাড়িয়ে আমরা গোবরাপর এলাম। আর বছর বাজারের যে দোকানে তামাক খেয়েছিলাম। সেখানে আমরা তামাক খাবার জন্যে বসতে গিয়ে দেখি গোবরাপরের জজ বাবর সেজছেলে মল্লিনাথ বসে আছে। সে আমাকে দেখে টানাটানি করতে লাগল তাদের বাড়ি নিয়ে যাবার জন্যে। অন্ততঃ চা খেয়েও যেন যাই। তার দাদা রামকৃষ্ণমিশনের সন্ন্যাসী, অনেকদিন পরে বাড়ি এসেচেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করতেই হবে। তিনি নাকি আমার বই-এর খাব অন্যরাগী ইত্যাদি বলে বাড়ি নিয়ে গেল। আমার সঙ্গীকেও সে নিমন্ত্রণ করলে। ওদের মস্ত বড় বাড়ি, আর কত যে ছেলে মেয়ে ! সব ভাইগলি বড় চাকরি করে বিদেশে, এবার বাড়িতে ওদের সন্ন্যাসী ভাই এসে রামকৃষ্ণ-উৎসব কারচেন। সেই উপলক্ষে সবাই এসেচে। ওপরের ঘরে মেয়েরা গান গাইচে, বাইরের বৈঠকখানায় ছেলেরা তাস খেলচে—হৈ হৈ কান্ড। আমরা চা খাবার খেয়ে ভদ্রতা বজায় রাখার উপযক্ত একটি গলপগজব করে তখনি আবার পথে বার হলাম। পথে বার হয়ে কোথাও একদন্ডও থাকতে আমার ভালো লাগে না। আমার সঙ্গীটি যাবে পাশেরই গ্রামে তার জামাই-বাড়িতে। ওরা আচায্য বামন, এতক্ষণ নিজের মেয়ের ভাসরের কথা বলতে বলতে আসছিল। সেই ব্যক্তিটি ঘরে খাব সন্দিরী সন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও পািয়তাল্লিশ বছর বয়সে ছেলে না হওয়ার অজহাতে, আজ দ-মাস হোল পিনরায় দ্বিতীয়বার দার-পরিগ্রহ করেচে। সেই গলপ সে আমাকে নানাভাবে শোনাচ্ছিল। হঠাৎ জজাবাবদের বাড়ি থেকে বেরিয়েই সে আমার ওপর অত্যন্ত ভক্তিমান হয়ে উঠল। জজাবাবদের বাড়িতে আমার আদর-যত্ন দেখেই বোধ হয় ওর মনের ভাবের এ পরিবত্ত নাটকু হোল। বললে, দাদাবাব, আপনাকে এতক্ষণ চিনতে তো পারি নি। আপনি মাথা থেকে বের করে এমন একখানা বই লিখেচোন যার অন্ত বড় দামী দামী লোকে এত সংখ্যাতি করলেন, তখন তো আপনি সাধারণ মানষ নন। সম্পন্দ্রমে ও শ্রদ্ধায় তার সাের গদগদ হয়ে উঠেচে, তারপর বললে, তবে বােব যদি অনািমতি করেন, আমিও নিজের পরিচয়টা দিই। এতক্ষণ দিই নি, কারণ বিদেশে, পথঘাটে, নিজের পরিচয় না দেওয়াই ভাল। দিয়ে কি হবে ? আমার নাম নদে শান্তিপর থেকে আরম্ভ করে কলকাতা পৰ্য্যন্ত সবাই জানে, আপনার শ্ৰীগরের চরণকৃপায়, হে হে”। কৌত হলের সহিত ওর মাখের দিকে চাইলাম। কোন ছদ্মবেশী মহাপরিষের সঙ্গে এতক্ষণ আমার ভ্ৰমণ করবার সৌভাগ্য ঘটেচে না জানি। লোকটা বললে—আমার নাম, দাদাবাব, হাজারী পরটা। আমি অবাক হয়ে বললাম-হাজারী— ? —আজ্ঞে, হাজারী পর্যটা। -হাজারী পরটা ? --আজ্ঞে, সেই আমিই এই অধীন। বলে সে আমার মাখের ভাব পরিবত্তন লক্ষ্য করবার জন্যে আমার মাখের দিকে চেয়ে রইল। বোধ হয় আমার বিসময়কে পণ বিকাশের সময় দেওয়ার জন্যে। কিন্তু ՑՏ