বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মড়ে পিপড়ে বাসা বেধেছে। দশ্যটা দেখে আমার মনে হোল এই সব সত্যিকারী: বাংলার বনের দশ্য, ট্রপিক্যাল বনানীর দশ্য না দেখলে বাংলাকে চিনিব কি করে ? শহরের লোকের শহরেই জন্ম, শহরেই বিবাহ, শহরেই মাতৃত্যু--তারা সত্যিকার বাংলার রপ। কখনও দেখে ? যে বাংলার মাটির বৈষ্ণব কবিতা, গ্রাম্য সঙ্গীত, ভাটিয়ালি গান, কীৰ্ত্তন, শ্যামাসঙ্গীত, পাঁচালি, কবি-এরা সে বাংলাকে কখনও দেখলে না। যে-বাংলার শিলপ কাঁথা, শীতলপাটী, মাদর, কড়ির আলনা, কড়ির চাবাড়ি, খাগড়াই পিতলকাঁসার জিনিস-সে। বাংলাকে এরা কখনও জানলে না। অথচ সমস্ত জাতিটার যোগ রয়েচে যার সঙ্গে—আর সে কি গভীর যোগ রয়েচে, তা এই পল্লীপথে পায়ে হোটে, বেড়িয়ে আমি খব ভাল বঝতে পারাচি। পাটশিমলে ঢকে একটা ক্ষদে জাম গাছতলায় শিকড়ের গায়ে বসে এই কথা কটা লিখচি, চারিধারে পাটশিমলের বন। আমাদের মনে হয়। সমগ্র বাংলা দেশের মধ্যে যদি কোথাও বন জঙ্গল ও বাঁশবনকে যথেচ্ছ বদ্ধির সংযোগ দেওয়া হত।--তবে এই ধরনের নিবিড়, দাভেদ্য বনানীর সন্টি হোত দেশে। এর প্রকৃতি মালয় উপদ্বীপের বা সন্মাত্রা, যবন্দ্বীপের ট্রপিক্যাল (Rain forest)-এর সমান না গেলেও বিহার, সাঁওতাল পরগণা বা মধ্যভারতের অরণ্যের চেয়ে সর্বতন্ত্র। ট্রপিক্যাল রেন ফরেসেন্টর সঙ্গে এর সাদশ্যে আছে লতা জাতীয় উদ্ভিদের প্রাদাভাবে। এত নানা আকারের লতার প্রাচয্য শধ উষ্ণমন্ডলের বনানীর নিজস্ব সম্পদ। এই জন্যে এই সব বনের রােপ স্বতন্ত্র। এত বংশ আন্ডারগ্রোথ (Bush undergrowth)-ও নেই সিংহভূম বা মধ্যভারতের বনে। অলপ জায়গার মধ্যে এত বিভিন্ন শ্রেণীর উদ্ভিদের সমাবেশও সে সব বনে নেই। মোহিনী কাকাদের চন্ডীমণডপে বসে দেখছিলাম—সামনের বহিস্টবিধৌত বনপত্রসম্পভারের শোভা, নিৰ্ম্মমল নীল আকাশে, সেই আকাশ অনেকদিন পরে মেঘশ্যান্য, আশচযা মরকত-শ্যাম পত্রপঞ্জের ওপর ঝলমলে পরিপািণ সৰ্য্যোলোক। চন্ডীমন্ডপের উঠোনে একটা তরণ নারকোল বক্ষের শাখাপত্রের সম্পন্দন বড় ভাল লাগচে । প্রাচীন কালের ছোট ইটের ভাঙা বাড়ি, ভাঙা চন্ডীমণডপ, ছাদাভাঙা পতেঙ্গার দালান পব্বেকার সম্পন্ন গহস্থের বিত্তমান শ্ৰীহীনতার সপরিচিত চিহ্ন চারিদিকে। দাপরের একটু পরেই পাটশিমলে থেকে বার হই। দধারে প্রকাশড বিশিঝাড়, আরবছরে দেখা সেই কালীবাড়ির বাঁশঝাড়টা। বাঁশ না কাটলে কি ভাবে বাড়তে পারে তা কালীবাড়ির বাঁশঝাড় না দেখলে বোঝা যাবে না। বাঁশের দাভেদ্য জঙ্গল। এ বাঁশি কালীপ জোর দিন ভিন্ন এবং ঠাকুরের প্রয়োজন ভিন্ন কেউ কাটতে পারে না, এ গ্রামের এই রীতি। এ গ্রামেও সব্বত্র আম গাছের তলায় যথেস্ট আমি পড়ে আছে, কেউ কুড়োয় না। মাঠে পড়লাম, অতি ভীষণ রৌদ্র, আজ, তব একটা হাওয়া আছে তাই ঠান্ডা। রাস্তায় এসে ছায়া পাওয়া গেল, কিন্তু দধারে যেমনি জঙ্গল, তেমনি মশা। এক জায়গায় একটা লাল টকটকে আমি কুড়তে একটি খানি দাঁড়িয়েচি, অমনি মশাতে একেবারে ছেকে ধরেচে। সাঁড়াপোতার বাজার ছাড়িয়ে কল্যকার সঙগী সেই হাজারী পরটার বেয়াই বাড়ি গেলাম। হাজারী পরটা বাইরে বসে তামাক খাচ্ছিল, আমায় দেখে লাফিয়ে উঠল, “আসন, দাদাবাব, মহা সৌভাগ্য যে আপনি এলেন, এঃ, মখ যে লাল হয়ে গিয়েচে রোদো-(মািখ লাল হওয়ার যদিও আমার কোনো উপায় নেই, আমার কালো রং-এ) আসন, বসন। তারপর সে নিজেই একখানা পাখা নিয়ে এল। ছটে । বাতাস দিতে আরম্পভ করলে নিজেই, তার বেয়াইকে ডেকে নিয়ে এল, আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলে-মহা খাতির। অনেকক্ষণ-প্ৰায় ঘণ্টাখানেক সেখানে বসে গলাপ SG: