বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:দিনের পরে দিন - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হঠাৎ এক বন্ধ উড়িয়া ব্ৰাহ্মণ এসে ভিক্ষা চাইলো। তার নাম বাইধর মিশ্র, বাড়ী পরীর কাছে মালতী-পাতপাের। ওর বারো বছরের ছেলে বাড়ী থেকে আজ দশ-তিন মাস ভিক্ষে করতে বেরিয়েচে এবং খবর পাওয়া গিয়েচে ছোকরা সিং ভূমে এসেচে। তাই বাইধর খাজতে বেরিয়েচে ছেলেকে। হলদিপকুর স্টেশনে নেমে গাঁয়ে গাঁয়ে বেড়াচ্চে । উড়িয়া ভাষায় বল্লে-কাল রাতে এক মন্ডলের বাড়ী উঠেছিলাম, এমন ঝড়বান্টি এল, ভাত রান্না করতে পারলাম না। কিছ খাইনি রাত্রে। ওকে আমরা কিছ পয়সা ও মড়ি দিলাম। একটা তেল দিলাম, ও একটা ফাঁপা বাঁশের লাঠির মধ্যে তেলটেকু পরে নিলে। কি সন্দির সরল বন্ধ ব্ৰাহ্মণ। হেসে বল্লে-বাব, বাড়িকে বাড়ি, চণ্ডগাকে চঙ্গা। খাব খাশী। আমরা কোয়ালি থেকে বাল্টি থামলে বেরিয়ে গররা নদী পার হলাম। (রাখা মাইনসের সেই গররা নদী, এখানে ছাৎনা পাহাড় থেকে বেরিয়েচে) তারপর বন ও জগুগলের পথে এলাম হরিনা গ্রামের মহাদেব স্থানে। এই বনের মধ্যে এক ভাঙা মন্দির, চারিদিকে বট, আমলকী, পলাশ, বিলাব প্রভৃতি বাক্ষরাজি, মানষের হাতের নয়, স্বাভাবিক বন! দেবস্থান বলে লোকে কাটেনি। ওখানে একটা বিশ্রাম করে নিয়ে আবার পথে বেরই। পথ চলার আনন্দ এমন একটা নেশা আনে মনে, ছোট্ট একটা বন দেখলেও মনে হয় অদভুত জিনিস দেখচি। বাহ্যজগৎকে গ্রহণ করে যে মন, সে শািন্ধ উপভোগ করে ক্ষান্ত থাকে না, সন্টিও করে। গররা নদী পার হবার পরে আর একটা ক্ষদ্র নদী পেলাম, সেটা পার হয়ে বেগ নাড়ি গ্রাম। সামনের পাহাড়ে খারিয়া জাতিরা জমি চাষ করচে বন কেটে, বোধহয় সে বাঁকা জায়গাতে খড় হয়েচে, শাক খড়ের ক্ষেত রাঙা দেখাচ্চে, বেগনাড়ি গ্রামের পাশ দিয়ে পথটি, অনেকগলো বড় বড় গাছ পথের ধারে, বাঁশঝাড়, তেতুিল, মহীয়া, অজ্ঞজন। এতক্ষণ দেখছিলাম মেয়েদের সিথিতে সিদর, পরনে শাড়ী-এখানে দেখলাম মেয়েদের মোটা হাত-বোনা কাপড় দটি করো জড়ানো-হো বা সাঁওতালদের ধরনে। অনেক টোমাটো ক্ষেত পথের os একটি বন্ধ মহিষ চরাচ্চে, তাকে বল্লাম-দবিলবেড়া কতদার ? সে বল্লে—সামনে মাগর, আর নেংগাম লােগালাগি, নেংগাম আর দািবলবেড়া VSCVLTVS IV || নতুন ভাষা শিখলাম। ভিড়াভিড়ি' মানে কাছাকাছি, কিন্তু এখানেই গোলমাল। ১৪ মাইল পথ। তখন হাঁটা হয়ে গিয়েচে, ক্ষধাত্ত ও তৃষ্ণাৰ্ত্তও বটে।- - সে অবস্থায় এ দেশের লোকের মখে ভিড়াভিড়ি’ শনে খর্ব আশাব্যস্ত হলাম না। এরা তিন মাইলকেও কাছাকাছি বলতে পারে। একটা পাহাড় দেখিয়ে বল্লে - ঐ পাহাড়টা দেখচিস, ঐ পাহাড়টা ঘরে যেতে হবেক। এ জায়গাটি চেয়ে দেখি বড় চমৎকার। তিনদিকে শৈলমালা ও নিবিড় বন আমাদের পথকে ঘিরেচে। অদধচন্দ্রাকারে, অবিশ্যি দরে দরে। জোজড়ি শিখরদেশ আর দেখা যায় না, নারদা peak ডাইনে বহ , পিছনে, অসপস্ট দেখা যাচ্চে, রোদ ফটেচে পশ্চিম গগনে, অথচ বাঁদিকের ছাৎনা ও আটকুশী শৈলমালা সাদা কুয়াশার মত মেঘে ঢাকা। যেন দাডিজলিংয়ের কুয়াশা। ঠান্ডা হাওয়া বইচে সেদিক থেকে। একদিকে শাল কেন্দবন পথের পাশেই। বড় বড় শিলাখণ্ডড সব্বত্র। পাহাড়টা খাব উচ, ঘরে যাবার সময় বাঁ-পাশে পৰ্ব্বতসানিতে বনশোভা বেশ দেখালো পড়ন্ত রোদে । পাকা কুল খেতে খেতে যাচ্চে একদল বন্য মেয়ে। দািবলবেড়া তাঁবতে পৌঁছলাম বেলা পাঁচটাতে। পাহাড়ের নিম্পনসােনর বন যেখানে শেষ হয়েচে, সেইখানেই তাঁবা পাতা। Ubn