পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
দুর্গেশনন্দিনী

বিমলা দেখিলেন যে, রাজপুত্র যাবজ্জীবন কেবল অস্ত্র-শিক্ষা করেন নাই। বিমলা উত্তর করিলেন, “একাকিনী যাওয়া অনুচিত কেন?”

যুব। পথে নানা ভীতি আছে।
বি। তবে আমি মহারাজ মনসিংহের নিকটে যাইব।

 রাজপুত্র জিজ্ঞাস করিলেন, “কেন?

 বি। কেন? তাঁহার কাছে নালিশ আছে। তিনি যে সেনাপতি নিযুক্ত করিয়াছেন, তাঁহা কর্ত্তৃক আমাদিগের পথের ভয় দূর হয় না। তিনি শক্রনিপাতে অক্ষম।

 রাজপুত্র সহাস্যে উত্তর করিলেন, “সেনাপতি উত্তর করিবেন যে, শক্রনিপাত দেবের অসাধ্য; মনুষ্য কোন্ ছার; উদাহরণ, স্বয়ং মহাদেব তপোবনে মন্মথ-শত্রুকে ভস্মরাশি করিয়াছিলেন; অদ্য পক্ষমাত্র হইল, সেই মন্মথ তাঁহার এই মন্দির-মধ্যেই বড় দৌরাত্ম্য করিয়াছে।”

 বিমলা ঈষৎ হাসিয়া কছিলেন, “এত দৌরাত্ম কাহার প্রতি হইয়াছে?”

 যুবরাজ কহিলেন, “সেনাপতির প্রতিই হইয়াছে।”

 বিমলা কহিলেন,“মহারাজ এমন অসম্ভব কথা বিশ্বাস করিবেন কেন?”

যুব। আমার সাক্ষী আছে।
বি। মহাশয়, এমন সাক্ষী কে?
যুব। সুচরিত্রে—

 রাজপুত্রের বাক্য শেষ হইতে না হইতে বিমলা কছিলেন, “দাসী অতি কুচরিত্র। আমাকে বিমলা বলিয়া ডাকিবেন।”

 রাজপুত্র বলিলেন—“বিমলাই তাহার সাক্ষী।”

বি। বিমলা এমত সাক্ষ্য দিবে না।