আনারউন্নিসা, চিরদিনই অভিমানিনী। সে মনে মনে ভাবিল, এ পত্র মীর লতিফের মনের ভিতরের কথাই বহন করিতে আনিয়াছে।
তাহার পিতা সে দিন বলিয়াছিলেন,—“নবাবের সহিত তোমার বিবাহের কথা শুনিয়া মীরলতিফ হাঁ কি না ভালমন্দ কিছুই বলিল না। বরঞ্চ তাহার মুখের ভাব দেখিয়া বোধ হইল, সে যেন ইহাতে তিলমাত্র দুঃখবোধ করে নাই।”
মীর লতিফ সংযমের ও সহিষ্ণুতার বলে তাহার মূখে যে উদ্বেগহীন ভাবটী আনিয়াছিল, জামাল খাঁ ভ্রান্তিবশে সেটিকে উপেক্ষার ভাব বলিয়া ধরিয়া লইয়াছিলেন। আর এই জন্যই তাহার নিজের মনগড়া একটা অভিমতই, তাঁহার কন্যার নিকট ব্যক্ত করিয়াছিলেন।
আনার উন্নিসার মনে এখন পিতৃকথিত সেই উপেক্ষার কথাটাই খুব জাঁকিয়া বসিল। স্থিরভাবে বিবেচনার শক্তি তাহার ছিল না।
সে বুঝিল,—যে মীর লতিফ এক মুহূর্ত্তের অদর্শনে ব্যাকুল হইয়া পড়িত, আজ সে একবার আমার সহিত দেখা করিবার অবকাশ পাইল না। আমি তাহার নিকট বিদায় লইবার পূর্ব্বেই সে নিষ্ঠুরের মত চলিয়া গেল। আমার মনের দুটো দুঃখের কথা না শুনিয়াই, সে সমবেদনার দেনা-পাওনার ব্যাপারটা এই ভাবেই কি রোক শোধ করিয়া দিল? হায়! অকৃতজ্ঞ মীর লতিফ!
মীর লতিফের এই অকৃতজ্ঞতা, তাহার চক্ষে খুবই অসহনীয় বলিয়া বোধ হইল। এজন্য লতিফের উপর তাহার খুব রাগ হইল।
৯৪