পাতা:দেশের কাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[২]

মার আসচে তাদেরই হাত দিয়ে। আজ বলতে এসেচি, আত্মাকে অবমানিত করে রাখা আর চলবে না। আমরা বল‍্তে এসেচি যে, আজ আমরা নিজের দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করলেম। একদিন সেই দায়িত্ব নিয়েছিলেম, আত্মশক্তিতে বিশ্বাস রক্ষা করেছিলেম। তখন জলাশয়ে জল ছিল, মাঠে শস্য ছিল, তখন পুরুষকার ছিল মনে। এখন সমস্ত দূর হয়েচে। আবার একবার নিজেকে নিজের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

 কোনো উপায় নেই, এত বড় মিথ্যা কথা যেন না বলি। বাহির থেকে দেখলে তো দেখা যায় কিছু পরিমাণেও বেঁচে আছি। কিছু আগুনও যদি ছাই-চাপা পড়ে থাকে তাকে জাগিয়ে তোলা যায়। এ কথা যদি নিশ্চেষ্ট হয়ে স্বীকার না করি তবে বুঝব এটাই মোহ। অর্থাৎ যা নয় তাই মনে করে বসা।

 একটা ঘটনা শুনেচি—হাঁটুজলে মানুষ ডুবে মরেচে ভয়ে। আচমকা সে মনে করেছিল পায়ের তলায় মাটি নেই। আমাদেরও সেই রকম! মিথ্যে ভয় দূর করতে হবে, যেমনি হোক্ পায়ের তলায় খাড়া দাঁড়াবার জমি আছে এই বিশ্বাস দৃঢ় করব সেই আমাদের ব্রত। এখানে এসেচি সেই ব্রতের কথা ঘোষণা করতে। বাইরে থেকে উপকার করতে নয়, দয়া দেখিয়ে কিছু দান করবার জন্যে নয়। যে প্রাণস্রোত তার আপনার পুরাতন খাত ফেলে দূরে সরে গেছে বাধামুক্ত ক’রে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এস, একত্রে কাজ করি।

সং বো মনাংসি সংব্রতা সমাকৃতীর্ণ মামসি।
অমী যে বিব্রতা স্থন তান্ বঃ সং নময়ামসি॥

এই ঐক্য যাতে স্থাপিত হয়, তারই জন্যে অক্লান্ত চেষ্টা চাই। ঘরে ঘরে কত বিরোধ। বিচ্ছিন্নতার রন্ধ্রে রন্ধে, আমাদের ঐশ্বর্য্যকে আমরা ধূলিস্খলিত করে দিয়েচি। সর্ব্বনেশে ছিদ্রগুলোকে রোধ করতে হবে আপনার সব কিছু দিয়ে।