পাতা:নটীর পূজা - প্রচার পুস্তিকা (১৯৩২).pdf/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অনেকদিন থেকেই লিখে আসচি, জীবনের নানা পূর্ব্বে নানা অবস্থায়। সুরু ক’রেচি কাঁচা বয়সে―তখনো নিজেকে বুঝিনি। তাই আমার লেখার মধ্যে বাহুল্য এবং বর্জ্জনীয় জিনিয ভূরি ভূরি আছে তাতে সন্দেহ নেই। এ সমস্ত আবর্জ্জনা বাদ দিয়ে বাকি যা থাকে আশা করি তার মধ্যে এই ঘোষণাটি স্পস্ট যে, আমি ভালোবেসেচি এই জগৎকে, আমি প্রণাম ক’রেচি মহৎকে, আমি কামনা ক’রেচি মুক্তিকে, যে মুক্তি পরম পুরুষের কাছে আত্মনিবেদনে, আমি বিশ্বাস ক’রেচি মানুষের সত্য মহামানবের মধ্যে, যিনি সদা জননাং হৃদয়ে সন্নিবষ্টঃ। আমি আবাল্যঅভ্যস্ত ঐকান্তিক সাহিত্য সাধনার গণ্ডীকে অতিক্রম ক’রে একলা সেই মহামানবের উদ্দেশে যথাসাধ্য আমার কর্ম্মের অর্ঘ্য আমার ত্যাগের নৈবেদ্য আহরণ ক’রেচি―তাতে বাইরের থেকে যদি বাধা পেয়ে থাকি অন্তরের থেকে পেয়েচি প্রসাদ। আমি এসেচি এই ধরণীর মহাতীর্থে―এখানে সর্ব্বদেশে সর্ব্বজাতি ও ইতিহাসের মহাকেন্দ্রে আছেন নরদেবতা,―তাঁরি বেদীমূলে নিভৃতে ব’সে আমার অহঙ্কার আমার ভেদবুদ্ধি ক্ষালন করবার দুঃসাধ্য চেষ্টায় আজও প্রবৃত্ত আছি।

 আমার যা কিছু অকিঞ্চিৎকর তাকে অতিক্রম ক’রেও যদি আমার চরিত্রের অন্তরতম প্রকৃতি ও সাধনা লেখায় প্রকাশ পেয়ে থাকে, আনন্দ দিয়ে থাকে, তবে তার পরিবর্ত্তে আমি প্রীতি কামনা করি আর কিছু নয়। এ-কথা যেন জেনে যাই, অকৃত্রিম সৌহার্দ্দ্য পেয়েচি, সেই তাঁদের কাছে যাঁরা আমার সমস্ত ত্রুটি সত্ত্বেও জেনেচেন সমস্ত জীবন আমি কী চেয়েচি, কী পেয়েচি, কী দিয়েচি, আমার অপূর্ণ জীবনে অসমাপ্ত সাধনায় কী ইঙ্গিত আছে।

 মর্ত্ত্যলোকের শ্রেষ্ঠদান এই প্রীতি আমি পেয়েচি এ কথা প্রণামের সঙ্গে বলি। পেয়েচি পৃথিবীর অনেক বরণীয়দের হাত থেকে তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতা নয় আমার হৃদয় নিবেদন ক’রে দিয়ে গেলেম। তাঁদের দক্ষিণ হাতের স্পর্শে বিরাট মানবেরই স্পর্শ লেগেচে আমার ললাটে, আমার যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা তাঁদের গ্রহণের যোগ্য হোক্।

 আর আমার স্বদেশের লোক যাঁরা অতি-নিকটের অতি-পরিচয়ের অস্পষ্টতা ভেদ করেও আমাকে ভালোবাসতে পেরেচেন, তাঁদের সেই ভালোবাসা হৃদয়ের সঙ্গে গ্রহণ করি।