পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ

ধারে ধীরে প্রস্থান করিল। দেখিয়া নবীনচন্দ্র বলিলেন, “এত কষ্টই বৃথা!” প্রভাত হাসিয়া উঠিল।

 বিলে যথেষ্ট মৎস্য ছিল। অল্পক্ষণ মধ্যেই মৎস্য ধৃত হইতে লাগিল। প্রথমে ফাৎনা তলাইয়া যায়, পরে সূত্রে টান পড়ে। তখন কি আশা, কি আগ্রহ,—না জানি কত বড় মৎস্য টোপ গিলিয়াছে! সাবধানে সূত্র টানিয়া আনিতে ধৃত জলচরের অঙ্গসঞ্চালনে জল চঞ্চল হইয়া উঠে। ক্রমে স্বচ্ছ জলে তাহার দেহ লক্ষিত হয়; তীরে তুলিলে সে ধড়ফড় করে,—তখন তাহাকে শৈবালমধ্যে রক্ষা করিতে হয়। সময় সময় ধৃত মৎস্য নিতান্ত নিকটে আসিয়াও পলাইয়া যায়, তখন কি হতাশা! জলমধ্যে যেটি অতি বৃহৎ বলিয়া বোধ হয়, হয় ত তীরে তুলিলে দেখা যায়, —সেটি ক্ষুদ্রকায়! ক্রমে কতকগুলি মৎস্য সংগৃহীত হইল।

 এ দিকে বেলাও শেষ হইয়া আসিল। তখন উভয়ে গৃহাভিমুখগামী হইলেন। পল্লীবালকদল কোলাহল করিতে করিতে অগ্রগামী হইল। তখন পশ্চিমদিগন্তে শরতের দিনান্তশোভা প্রকটিত হইতেছে। বিচিত্রবর্ণরঞ্জিত মেঘমালা নৃত্যপরা নর্তকীর চঞ্চল অঞ্চলের মত কখনও বিলম্বিত, কখনও সঙ্কুচিত, কখনও বিস্তারিত, কখনও আন্দোলিত হইতেছে। মেঘের উপর সমান, অসমান, সরল, বক্র রেখায় বর্ণের উপর বর্ণ ফুটিয়া উঠিতেছে; বর্ণের কোলে বর্ণ ভাসিয়া আসিতেছে। কোথাও উদ্ভেদোন্মুখ পদ্মপলাশের লোহিত আভা, কোথাও প্রবালের

২৫