পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ।

হইতেছে; গ্রামের দেবমন্দির ও কোন কোন গৃহ হইতে আরতির বাদ্যধ্বনি শ্রুত হইতেছে,—ধূনার ধূম পবনে মৃদুমধুর গন্ধের সঞ্চার করিতেছে। সে যেন স্নিগ্ধ শান্তির সুখদ আভাষ। পথে বালকগণ যে যাহার গৃহে প্রবেশ করিল। প্রভাত ও নবীনচন্দ্র গৃহে আসিলেন।

 দেখিতে দেখিতে পূজার কয় দিন কাটিয়া গেল। একাদশীর দিন প্রভাতে কমলের স্বামী সতীশচন্দ্র আসিয়া উপস্থিত হইল। সতীশচন্দ্রের বাস পার্শ্ববর্ত্তী গ্রামে। সতীশচন্দ্র প্রভাতের সতীথ; বয়সে তাহার অপেক্ষা তিন বৎসরের বড়। উভয়ে একই বৎসর গ্রামের নিকটবর্ত্তী গ্রামস্থ বিদ্যালয় হইতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। প্রভাত কলিকাতায় পড়িতে যায়। সতীশচন্দ্রের পক্ষে তাহা সম্ভব হয় নাই। সে শৈশবে পিতৃহীন, গৃহে কেবল জননী, অন্য অভিভাবক নাই। জমী জমা যাহা ছিল, বহুদিন তত্ত্বাবধানের অভাবে তাহার আয় ক্রমেই কমিতেছিল। এ অবস্থায় তাঁহার পক্ষে বিদেশে যাওয়া ঘটিল না। সতীশচন্দ্র যে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল, সেই বিদ্যালয়েই শিক্ষকের পদ লইয়া গৃহে রহিল। তাহার আশা ও আকাঙ্ক্ষা সীমাবদ্ধ হইয়া পড়িল। কিন্তু শক্তি সীমাহীন স্থানে প্রযুক্ত না হইয়া সীমাবদ্ধ স্থানের মধ্যে প্রযুক্ত হইলে অধিকাংশ স্থলে সুফল দান করে। সতীশচন্দ্রের পক্ষে তাহাই হইল। স্বল্প আকাঙ্ক্ষা ও প্রচুর অবসর লাভ করিয়া সতীশচন্দ্র আপনার মনোবৃত্তিবিকাশে ও অবস্থার যথাসম্ভব উন্নতিসাধনে প্রবৃত্ত হইল। তাহার প্রবল

২৭